মামলা নিচ্ছে না পুলিশ লাশ নিচ্ছেন না স্ত্রী

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৫:১৮ PM, ২২ অগাস্ট ২০২২

Spread the love
ডিবিসি প্রতিবেদক;

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে সুমন শেখের মরদেহ ঘিরে স্বজনদের কান্নার রোল। পুলিশ মামলা নিচ্ছেন না বলে তাদের অভিযোগ। মামলা না করে স্বামীর মরদেহ নেবেন না বলে দাবি করেন তার স্ত্রী জান্নাত আক্তার। মামলা করতে আসেন পুরান ঢাকার আদালতপাড়ায়। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে ছয় বছরের শিশুসন্তান রাকিবকে কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বামী হত্যার ন্যায়বিচার দাবি করেন তিনি।

রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে সুমনের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল পুরান ঢাকার আদালতে মামলা করতে আসেন স্ত্রী জান্নাত। চুরির মামলার আসামি সুমন থানা হাজতের ভিতর আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি পুলিশের। তবে পরিবারের দাবি, সুমনকে থানা হেফাজতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকালও বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। তারা রামপুরায় সড়ক অবরোধও করেন।

এর আগে বিক্ষুব্ধ জনতা শনিবার হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এরই মধ্যে হাতিরঝিল থানার এসআই হেমায়েত হোসেন ও কনস্টেবল মো. জাকারিয়াকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের এডিসি হাফিজ আল ফারুককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ।

সুমনের স্ত্রী জান্নাত বলেন, দেশে বিচার আছে। সে চুরি করলে তার বিচার হবে। থানা হেফাজতে তাকে হত্যা করা হলো কেন? কোম্পানি ও পুলিশ আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমার কাছে পুলিশ ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিল। টাকা না দেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। এখন আমি আমার শিশুসন্তানকে নিয়ে কোথায় যাব। কোথায় দাঁড়াব। টাকা লাগলে টাকা দেব, আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই। এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।

শনিবার নিহতের স্বজন মোশাররফ হোসেন জানান, সুমনের মরদেহ নিতে হাতিরঝিল থানা থেকে তাদের পাঠানো হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে। সেখানে রাত ৮টার পর মরদেহ গোপনে নিয়ে যেতে বলে পুলিশ। কিন্তু তারা মরদেহ নেননি। মরদেহ না নিয়ে তারা বাসায় চলে যান।

গতকাল হাতিরঝিল থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার মেইন গেটে পুলিশ অবস্থান করছে। কেউ ভিতরে প্রবেশ করলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ভিতরে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি একাধিক নারী পুলিশ সদস্যও দেখা গেছে। গতকাল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে কেউ সুমনের মরদেহ বুঝে নিতে যায়নি।

সুমনের শ্যালক সুজন শেখ বলেন, আমরা রবিবার মামলা করতে আদালতে গিয়েছিলাম। তবে, আদালতের সময় শেষ হওয়ায় মামলা করতে পারেননি। আমার বোন জান্নাত আক্তার (সুমনের স্ত্রী) বাদী হয়ে মামলা করবেন। আমরা ন্যায়বিচার চাই। সুমন শেখকে হত্যা করেছে পুলিশ। মামলা না করা পর্যন্ত আমরা মরদেহ নেব না। নিহতের পরিবারের দাবি, সুমন রাজধানীর রামপুরায় ইউনিলিভারের পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র পিওরইটের বিপণন কার্যালয়ে ছয় বছর ধরে চাকরি করতেন। তার মাসিক বেতন ছিল ১২ হাজার টাকা। শুক্রবার রাতে বাসা থেকে পুলিশ তাকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায়। আটকের খবর পেয়ে রাতেই সুমনের পরিবার থানায় যান। এ সময় তাদের জানানো হয়, শনিবার সকালে সুমনকে আদালতে পাঠানো হবে। সকালে পরিবারের সদস্যরা থানায় গেলে সুমনের মৃত্যুর কথা জানায় পুলিশ।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ১৫ আগস্ট ইউনিলিভারের পিওরইট কোম্পানি থেকে ৫৩ লাখ টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় মামলার পর আল-আমিন, সোহেল রানা ও অনিক হোসেন নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। তারা এখন কারাগারে। জিজ্ঞাসাবাদে ওই তিনজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ও চুরির ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সুমন শেখকে শনাক্ত করা হয়।

এরপর শুক্রবার বিকালে রামপুরা মহানগর এলাকার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাসা থেকে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষে রাত ১১টার দিকে তাকে থানা হেফাজতে রাখা হয়। শনিবার সকালে সুমনকে আদালতে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাত ৩টা ৩২ মিনিটে পরনে থাকা ট্রাউজার দিয়ে লোহার গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় সে। যা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। ফুটেজটি নিহতের স্ত্রীসহ স্বজনদেরও দেখানো হয়।

তবে পরিবারের পক্ষ থেকে সুমনকে মারধর করে হত্যার যে অভিযোগ করা হচ্ছে এ বিষয়ে ডিসি আজিমুল হক বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সুমন শেখের গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার দড়িকান্দিতে। তিনি রাজধানীর রামপুরায় ইউনিলিভারের পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র পিওরইটের বিপণন কার্যালয়ে মালামাল ডেলিভারির কাজ করতেন।

এদিকে, গতকাল রাত সোয়া ৮টা পর্যন্ত সুমনের পরিবারের কেউ লাশ নিতে আসেনি বলে জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি এইচ এম আজিমুল হক।

আপনার মতামত লিখুন :