গাইবান্ধায় সাঁওতাল হত্যা দিবস আজ; চার বছরেও হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা অধরা
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল হত্যাকাণ্ডের ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও অধরা হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা। ফলে বিচারের বানী এখনও নিরবে নিভৃতে কাঁদছে। সেদিনের বিভীষিকাময় নারকীয় হত্যাকাণ্ডের কথা মনে হলে অসহায় সাঁওতালরা আত্কে উঠে। আগুনের লেলিহান শিখায় যেমন তাদের বাড়ি-ঘর পুড়ে ভষ্ম হয়ে গিয়েছিল তেমনি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিল ৩ জন সংগ্রামী সাঁওতাল। এছাড়াও ওইদিনের সাঁওতাল পুলিশ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের প্রায় আহত হয়েছিল কমপক্ষে ৩০ জন।
জানা গেছে, রংপুর চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমি দখলকে কেন্দ্র করে সাঁওতাল পুলিশের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় ২০১৬ সালের। সাঁওতালরা তাদের পূর্বপুরুষের প্রায় ১৮৪২ দশমিক ৩০ একর জমি চিনিকল কর্তৃপক্ষ শর্ত ভঙ্গ করলে তারা বাপদাদার জমি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাড়ি-ঘর নির্মাণ সহ চাষাবাদ শুরু করে। কিন্তু চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি তাদের দাবী করে পুলিশকে সাথে নিয়ে ওই জমিতে রোপিত আখ কাটতে গেলে সাঁওতালরা বাঁধা দিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে প্রায় ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই ৩ জন সাঁওতাল মারা যান। এরপর সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় পুলিশ। আগুনে বাড়ি-ঘর সহ গবাদীপশু পুড়ে কাবাব হয়ে যায়। এ ঘটনায় সেসময় গোটা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবি সংগঠন প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত হয় নানা কর্মসূচি। এসময় শাসকদল নানা উপায়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় হত্যাকাণ্ডের বিচার সহ সাঁওতালদের পুর্নবাসনের।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় তৎকালীন এমপি আবুল কালাম আজাদ সহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ সহ ৫০০-৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে সাঁওতালদের পক্ষ থেকে মামলা দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে ওই এমপি সহ মূল আসামীদের বাদ দিয়ে চার্জশীট দাখিল করে পুলিশ। এতে সাঁওতালরা এ চার্জশীটের বিরুদ্ধে নারাজী করলে মহামান্য আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সিআইডির পক্ষ থেকে কোন রিপোর্ট দেওয়া হয়নি।
সাঁওতাল নেতারা জানান, ৬ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের দাবীতে গোবিন্দগঞ্জ শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে। এখানে সাঁওতাল নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্য দেয়ার কথা রয়েছে। সেই সাথে বিচারের দাবীতে ৭দিনের বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান রয়েছে।
এদিকে, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পূনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কে জানান, দীর্ঘদিন থেকে তারা হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবীতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তিনি বলেন, তাদের দাবী পূরুন না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর বিরোধপূর্ণ জমিতে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ পুলিশ সাথে নিয়ে সাহেবগঞ্জ ইক্ষুখামারে আখ কাটতে যান। এসময় সাঁওতালরা তাদের বাপ-দাদার জমি দাবী করে আখ কাটতে বাঁধা দেন। এতে চিনিকল শ্রমিক, পুলিশ ও সাঁওতালদের ত্রিমুখি সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডু নামের তিন সাঁওতাল। আহত হন উভয়পক্ষের প্রায় ৩০জন। সেই থেকে দিনটিকে সাঁওতাল হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন সাঁওতালরা।

