গোবিন্দগঞ্জে নামমাত্র মূল্যে জলমহাল ইজারা; রাজস্ব থেকে বঞ্চিত সরকার

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৫:০২ PM, ০৩ নভেম্বর ২০২০

Spread the love

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সরকারি নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে জলমহাল ইজারা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে এ খাত থেকে বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া, শাখাহার, রাজাহার ও কাটাবাড়ী ইউনিয়নে ২০ একরের নীচে প্রায় ২শতাধিক সরকারি জলমহাল রয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ৭৫টি জলমহালের ১৪২৭ থেকে ১৪২৯ বাংলা সন পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদী ইজারার জন্য চলতি বছরের ১০ মার্চ উপজেলা জলমহাল কমিটি বিজ্ঞপ্তি দেন। সেই মোতাবেক ২৪ মার্চ দরপত্র দাখিলের দিনধার্য করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ৫ মে উপজেলা জলমহাল কমিটি ইজারার ফলাফল ঘোষণা করেন। দেখা যায় ১৭টি পুকুরের বিপরীতে যে মৎস্যজীবি সমাজ কল্যাণ সমিতি অংশগ্রহণ করে তাদের সমিতির কোনো রেজিস্ট্রেশন ছিলনা। পরবর্তীতে প্রকৃত নিবন্ধনকৃত মৎস্যজীবি সমিতিগুলো জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করেন। জেলা প্রশাসক ১৯ মে ইজারা প্রাপ্ত সমিতিগুলোর নিবন্ধন না থাকায় পূর্ববর্তী ইজারার আদেশ বাতিল করে আপিল মঞ্জুর করেন। এরপর পূর্ববর্তী ইজারা প্রাপ্ত সমিতিগুলো বিভাগীয় কমিশনার রংপুর কার্যালয়ে আপিল করলে ২০ জুলাই তাদের আপিল খারিজ করে জেলা প্রশাসকের আদেশ বহাল রাখেন।

সরকারি জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ এর ২ (খ) এবং ৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে কোনো রেজিস্ট্রেশনবিহীন সমিতি সরকারি জলমহাল ইজারায় অংশ গ্রহণ করতে পারবেনা। কিন্তু সরকারি সকল নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে উপজেলা জলমহাল কমিটি নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে অনিবন্ধিত ১৬টি মৎস্যজীবি সমাজ কল্যাণ সমিতিকে ইজারা দেন। ফলে প্রকৃত মৎস্যজীবি এবং নিবন্ধিত মৎস্যজীবি সমিতির সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত এবং মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনিবন্ধিত সমিতিগুলো পুকুরগুলোর ইজারা বাবদ ১২ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা উল্লেখ করে দরপত্র দাখিল করে। অপর দিকে, প্রকৃত মৎস্যজীবি সমিতিগুলো জেলা প্রশাসকের আদেশ পাওয়ার পর ৬২ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করেন। অনিবন্ধিত সমিতিগুলোকে অনিয়ম করে ইজারা দেওয়ায়। উল্লেখিত পুকুর সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আলীগ্রাম মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি শ্রী সুকমল ও কামদিয়া মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি শ্রী বকুল জানান, সরকারি জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ এর ৬ (৫) অনুচ্ছেদে উপজেলা জলমহাল কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবং ২০ একরের নীচে জলমহালের চুড়ান্ত নিস্পত্তি ও শেষ ধাপ হিসেবে বিভাগীয় কমিশনারের আদেশই চুড়ান্ত। কিন্তু ওই অনিবন্ধিত সমিতিগুলো সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে ভূমি আপলি বোর্ডে আপিল করে কালক্ষেপন করায় সময়মত চুক্তিনামা সম্পাদন না হওয়ায় জাতীয় মৎস্য উৎপাদন সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী “জাল যার জলা তার” নীতিটি উপেক্ষা করা হচ্ছে। ফলে ১২টি প্রকৃত মৎস্যজীবি সমিতির প্রায় ২০০টি পরিবার অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছেন।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মণের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করলে প্রকৃত মৎস্যজীবি সমিতি ওই আপিলের রায় পান। কিন্তু ভূমি আপিল বোর্ডে আপিল চলমান থাকায় চুক্তিনামা সম্পাদন করা যাচ্ছেনা।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন জানান, প্রকৃত মৎস্যজীবি সমিতির করা আপিলে পর্যালোচনায় দেখা যায় পূর্ববর্তী ইজারা প্রাপ্ত সমিতিগুলো নিবন্ধন ও দরপত্রে মূল্য কম থাকায় ইজারা আদেশ বাতিল করে আপিল মঞ্জুর করে আপিলকারীদের চুক্তিনামা সম্পাদন করে দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রকৃত মৎস্যজীবি সমিতির সদস্যরা বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

আপনার মতামত লিখুন :