গোবিন্দগঞ্জে অবৈধ ইটভাটা; পরিবেশ ও কৃষিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে অর্ধশত অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটার কারণে পরিবেশ ও কৃষিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল দেশ বাংলাদেশ। তথ্যমতে দেশে রাস্তাঘাট, মিল-কারখানা, অপরিকল্পিত বাড়ি-ঘর ইত্যাদি অবকাঠামো তৈরীতে চাষযোগ্য জমি থেকে প্রতি বছর হারিয়ে যাচ্ছে লক্ষাধিক হেক্টর জমি। বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য পাল্লা দিয়ে নিবিড়ভাবে চাষ করা হচ্ছে ধান আর ধান। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ধানের সঙ্গে আনুপাতিক হারে অন্যান্য ফসলের (ডাল, তেল, শাক-সবজি, ফল-মুল) চাষ আশানুরুপ বাড়ানো যায়নি। দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে পারিনি।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্যানুসারে উপজেলায় ৩৭ হাজার হেক্টর আবাদী জমি রয়েছে। এদিকে প্রায় ৬৭ হেক্টর আবাদী জমিতেই গড়ে উঠেছে অর্ধশত ইটভাটা। তাছাড়া মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের পুনতাইড়, কামারদহ ইউনিয়নের ফাসিতলা ও তালুককানুপুর ইউনিয়নের ৪১ মাইল নামক এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁসে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা। এতে করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে স্কুলগামী কোমলমতি শিশুরা।
আর এসব ভাটায় নি¤œমানের জ্বালানী ও অনুপযোগী চিমনী ব্যবহারের কারণে পরিবেশ দূষণের সহায়ক হিসাবে কাজ করছে। ইটভাটার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে ছাই, ধূলা ও সালফার- ডাই-অক্সাইডসহ ক্ষতিকর গ্যাস। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া নিয়ম না মানা এসব ব্যবসায়ীরা ইট তৈরীতে কৃষি জমির ঊর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। এর ফলে একদিকে যেমন জমির শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে অন্যদিকে কমে যাচ্ছে আবাদী জমি। অনেক কৃষক নিয়ম না মেনে পুকুর খনন করে ভাটা মালিকদের কাছে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে করে শস্যহানী, ঘাতক পদার্থে মরচে সৃষ্টি, ভূমিক্ষয়, ভূমিধস ও ভূমির ঊর্বরতা হ্রাসে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ইট বানানোর জন্য কাঠ পোড়ানো কিংবা মাটি না থাকায় গাছ কমে যাওয়া পরিবেশের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান বেড়ে যাচ্ছে, যা আমাদের পরিবেশ ও কৃষিতে বিপর্যয়ের জন্য ভয়াবহ ভবিষ্যৎ ডেকে আনতে পারে। গত বছরে জাতীয় এবং স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর মাত্র কয়েকটি ভাটায় অভিযান পরিচানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এসব ইটভাটা। ভাটাগুলো অবৈধ হয়ে থাকলে বন্ধ হয়না কেন ? নিশ্চিয়ই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভাটার মালিকরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ম্যানেজ ছাড়া ভাটা চালানো অসম্ভব।
এ বিষয়ে এপিএস ভাটার স্বত্তাধিকারী আতিকুর রহমান আতিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ভাটার সব কাগজপত্র সঠিক আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব ঠিক-ঠাক থাকলেও প্রশাসন চাইলে কোন না কোন দোষ বের করেই জরিমানা করে থাকে।
ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলামের (জাহিদুল) কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর সবাইকে ম্যানেজ করার পরও পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করেছিল। এজন্য এবারে আমি ওসব দায়িত্ব থেকে সরে আছি।
এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন দপ্তর রয়েছে, চাইলে তাদের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তাছাড়া নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট ও লোকবল কম থাকায় অভিযান বিলম্ব হচ্ছে। তবে শিগগিরি অভিযান করা হবে।

