ঘোড়াঘাটে ৫৮ লাখ টাকার মাদক জব্দ
লোটাস আহম্মেদ, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি;
দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী উপজেলা দিনাজপুরের হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট উপজেলা। মাদক পাচারের জন্য দেশের মাদক কারবারীদের অন্যতম টার্গেট এই দুই উপজেলা। ঘোড়াঘাট উপজেলার চারপাশে বেশ কয়েকটি জেলা ও উপজেলা সীমান্ত থাকায় এই রুটকেই বেছে নেয় মাদক কারবারীরা। পুলিশ ও র্যাব সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান এবং নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করেও ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে কমানো যাচ্ছে না মাদক কারবারীদের তৎপরতা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এই উপজলা দিয়ে কারবারীরা প্রতিনিয়ন মাদক পাঁচারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাহিনী গুলোর নিয়মিত অভিযানে লাখ লাখ টাকার বিভিন্ন মাদক সহ গ্রেপ্তারও হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তবে তাতেও কোন লাভ হচ্ছে না।
বাহিনী গুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছে, মাদক নিয়ন্ত্রন এবং মাদক কারবারীদের আইনের আওতায় আনতে তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। পাশাপাশি তারা গোয়েন্দা নজরদারীও বৃদ্ধি করেছে। তাদের কৌশলতার ফাঁদে মাঝে মাঝেই মাদকের বড় বড় চালান জব্দ হচ্ছে।
অপরদিকে দেখা যাচ্ছে, মাদক কারবারীরাও বাহিনী গুলোর চোখকে ফাঁকি দিতে মাদক পাঁচারে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। কারবারীরা মাদক পাঁচারের জন্য ঘোড়াঘাট সহ আশাপাশের একাধিক উপজেলার গ্রামগঞ্জের অলিগলির রাস্তা ব্যবহার করছে। পাশাপাশি পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে তারা একাধিকবার হাত বদল করে মাদকের চালান গন্তব্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। এ কাজে মাদক ব্যবসায়ীরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে অল্প কিছুর টাকা বিনিময়ে বিভিন্ন বয়সের কিশোর ও যুবকদের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য বহন করাচ্ছে।
ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ, র্যাব ও ডিএনসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১ সালের জানুয়ারী থেকে গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ঘোড়াঘাট থানা এলাকা থেকে মোট ৫৮ লাখ সাড়ে ৭৬ হাজার টাকা মাদক জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরমধ্যে রয়েছে ২৪’শ ৫৯ বোতল ফেন্সিডিল, ১৬’শ ১৯ পিচ ইয়াবা, ৬ কেজি ৭’শ ৬৮ গ্রাম গাঁজা, ৫২ গ্রাম হেরোইন এবং ১৩৫ লিটার চোলাইমদ সহ বেশ কয়েকটি গাঁজার গাছ।
এই মাদক জব্দের বিপরীতে গত ২০২১ সালে মোট ১০৩টি মাদকের মামলা হয়েছে। তারমধ্যে পুলিশ ৯৭টি, র্যাব ৫টি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ১টি মামলার রুজু করেছে। এসব মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে মোট ১৫২ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবনকারী। এছাড়াও এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আরো প্রায় অর্ধ শতাধিক মাদক কারবারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, গত ২০২০ সালে এই উপজেলা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক জব্দ করেছিল প্রায় ৫৫ লাখ ১৭ হাজার টাকার। বাহিনীর গুলোর নিয়মিত অভিযান এবং করোনার প্রার্দুভাবে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে এই পরিমান কমার কথা থাকলেও, না কমে তা বেড়ে ৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
খোলা বাজারে অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘোড়াঘাট সহ এর পাশ্ববর্তী নবাবগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও পাঁচবিবি উপজেলাতে মাদক ব্যসায়ীরা ফেন্সিডিল প্রতি বোতল ১৮’শ থেকে ২৫’শ, ইয়াবা প্রতি পিছ ১’শ থেকে ১’শ ৫০, গাঁজা প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২৫ হাজার, হেরোইন প্রতি গ্রাম ৮ থেকে ১৫ হাজার, এ্যাম্পল প্রতি পিছ ৭০ থেকে ১’শ এবং চোলাই মদ প্রতি লিটার ১’শ থেকে ১’শ ৫০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঘোড়াঘাট-হাকিমপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফ আল রাজিব বলেন, প্রতি মাসে আমরা এই দুই উপজেলায় এক সপ্তাহের মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছি। এসব অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীরা নিয়মিত গ্রেপ্তার হচ্ছে। তবে আইনের কিছু ফাঁকফোকর দিয়ে তারা দ্রুত সময়ে জামিন পাওয়ায় তারা জেল থেকে বের হয়ে আবারো মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। যারা দীর্ঘদিন থেকে মাদক ব্যবসা করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে, আমরা যথাযথ তথ্য ও প্রমান সাপেক্ষে তাদেরকে মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে আমরা নিয়মিত বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ব্যক্তিদেরকে প্রতি মাসে চাল-ডাল সহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী বিতরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেওয়া হচ্ছে।
র্যাব-১৩ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদ বশির আহমেদ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সার্বক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করছি। বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদেরকে ধরতে আমাদের গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। রংপুর বিভাগের সব কয়টি জেলাতেই র্যারের বেশ কয়েকটি পৃথক কোম্পানী কাজ করে

