দুদকের মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০১:৪৩ PM, ১০ জানুয়ারী ২০২২

Spread the love

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ২২ কোটি ৩ লাখ ২১ হাজার ৫৯০ টাকার চাল আত্মসাতের দুদক কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে করে সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ২ হাজার ২৫৩টি ধর্মীয় সভার নামে ৫ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বিশাল অঙ্কের এ টাকা তৎকালীন স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের যোগসাজশে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর মিলে উল্লেখিত পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে। এ ঘটনায় গত বছরের ২৬ আগস্ট ১৬ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সহ ১৯ জনের নামে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হোসাইন শরীফ বাদী হয়ে তার কার্যালয়ে মামলাটি করেন। মামলাটি হওয়ার পর এখনো কোন আসামীই ধরা পড়েনি। বরং তারা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এদিকে, যার ডিও লেটারে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং যিনি চাল বিতরণে কোন অনিয়ম হয়নি বা সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়েছে মর্মে প্রত্যয়ন দেন- তিনি কিন্তু অধরাই রয়ে গেছেন। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ এই চাল বরাদ্দের ডিও লেটার ও প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জেলা ত্রাণ কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ধর্মীয় সভায় আসা ব্যক্তিদের খাবার বাবদ ৫ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়। ২০১৭ সালের জুনে অধিদপ্তর থেকে ২ হাজার ২৫৩টি প্রকল্পের অনুকূলে এই বরাদ্দে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু উল্লেখিত ব্যক্তিরা সিন্ডিকেট করে কোন কাজ না করেই সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

মামলার আসামীরা হলেন- আওয়ামী লীগের বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও তৎকালীন মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জহিরুল ইসলাম, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান (তৎকালীন) আকতারা বেগম রুপা, কামদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (বর্তমান) মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী, কাটাবাড়ির (তৎকালীন) রেজাউল করিম রফিক, শাখাহারের (তৎকালীন) তাহাজুল ইসলাম, রাজাহারের (তৎকালীন) আব্দুল লতিফ সরকার, সাপমারার (বর্তমান) শাকিল আলম বুলবুল, দরবস্তের (বর্তমান) শরিফুল ইসলাম জর্জ, তালুককানুপুরের (তৎকালীন) আতিকুর রহমান আতিক, নাকাইয়ের (তৎকালীন) আব্দুল কাদের প্রধান, রাখালবুরুজের (তৎকালীন) শাহাদত হোসেন, ফুলবাড়ীর (তৎকালীন) আব্দুল মান্নান মোল্লা, গুমানীগঞ্জের (তৎকালীন) শরীফ মোস্তফা জগলুল রশিদ রিপন, কামারদহের (তৎকালীন) শরিফুল ইসলাম রতন, কোচাশহরের (তৎকালীন) মোশাররফ হোসেন, শিবপুরের (তৎকালীন) সেকেন্দার আলী মন্ডল, শালমারার (তৎকালীন) আমির হোসেন শামিম ও গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর (তৎকালীন) গোলাপী বেগম।

আওয়ামী লীগের বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও তৎকালীন মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান বলেন, সেসময় আবুল কালাম আজাদ এমপি ছিলেন। তার ডিও লেটারে চাল বরাদ্দ দিয়েছেন এবং চাল সঠিকভাবে বিতরণ হয়েছে মর্মে তিনিই প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।

জানতে চাইলে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, তারা ধর্মীয় সভার নামে যে চাল বরাদ্দ নিয়েছিলেন তার সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তারা আমার ডিও লেটার জাল করেছেন এবং আমার সই স্ক্যানিং করে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ওই প্রত্যয়নে আমার দাপ্তরিক কোন স্মারক নম্বর ছিলনা। ডিও লেটার জাল বা প্রত্যয়নপত্র জাল এর বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখনো কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এ ব্যাপারে খুব শিগগিরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মামলার বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হোসাইন শরীফ বলেন, লোকবল কম থাকায় আমাদের অভিযান দৃশ্যমান হচ্ছেনা। কমিশন চাইলে অভিযুক্ত যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন দুদক। আর যেহেতু মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে সেহেতু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর আপনারা জানতে পারবেন কে কে জড়িত বা কে নির্দোষ।

উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় আসামীরা ২ হাজার ২৫৩টি ধর্মীয় সভা দেখিয়ে ৫ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন চাল সরবরাহে ডিও (আধা সরকারি পত্র) ইস্যু করেন। পরে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলররা নিজ নিজ ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডের ধর্মীয় অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন হয়েছে মর্মে প্রত্যয়ন দেন।

প্রসঙ্গত, মামলার মোট ১৯ আসামীর মধ্যে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) বাদে ১৮ জন আসামী গত ২৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। উচ্চ আদালত জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে গাইবান্ধা সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আসামীদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এ হিসেবে গত ২২ নভেম্বর জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তারা আজও আত্মসমর্পণ করেননি।

আপনার মতামত লিখুন :