কিশোরের বিয়ে ও পুলিশের ‘ঘুষ’কাণ্ড

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৫:৩৫ PM, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

Spread the love

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি;

তরুণীর বয়স ১৮-ঊর্ধ্ব, আর কিশোরের বয়স ১৪-এর নিচে। হঠাৎ বাড়ি থেকে তরুণী নিখোঁজ। প্রতিবেশী কিশোর ওই তরুণীকে নিয়ে গেছে- এমন দাবি করে কিশোরের পরিবারে সৃষ্টি করা হয় তরুণীর পরিবারের চাপ। এক পর্যায়ে কিশোরের সঙ্গে তরুণীর বিয়ে হয় ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে। তরুণীর বাড়িতে আটকে রেখে বিয়ের পর কিশোর ও তরুণীকে এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই অবস্থায় কিশোরকে উদ্ধার এবং বিয়ের পর যৌতুক চেয়ে মারধর ও তাড়িয়ে দেওয়ার পৃথক অভিযোগ নিয়ে দুই পরিবার থানায় যায়। অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে কিশোরের পরিবারের কাছ থেকে ২৪ হাজার টাকা ও তরুণীর পরিবার থেকে ২৭ হাজার টাকা ‘ঘুষ’ গ্রহণ করেন এএসআই কামরুল হাসান। ঘটনাটি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার।

উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের আলাদিয়ার আলগী গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে মিজান মিয়া বিজয়। সে উচাখিলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। বিজয়দের বাড়ি অবশ্য তারুন্দিয়া ইউনিয়নে। বিজয়ের ২০১৭ সালে পাস করা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সনদ অনুযায়ী তার জন্ম ২০০৭ সালে। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অভাবের তাড়নায় মাওনা এলাকায় একটি সোয়েটার কারখানায় শ্রমিকের কাজ নেয় সে। প্রতিবেশী মামাতো বোন নিখোঁজ হলে তরুণীর পরিবার দায়ী করে বিজয়কে। চাপ সৃষ্টি হলে কিশোরকে বাড়িতে ডেকে আনে তার পরিবার। তরুণীকে নেওয়ার কথা কিশোর অস্বীকার করলেও চাপ অব্যাহত থাকে। পরে নিজেরাই এক স্বজনের বাড়ি থেকে তরুণীকে বাড়িতে এনে বসানো হয় সালিশ। এতে তরুণীকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি হয় কিশোরের পরিবারের ওপর। সালিশে বসে ছেলের বাবাকে মারধরও করা হয়। সে সালিশে তরুণীর পক্ষে তার দুই স্বজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ভয় দেখানোয় কিশোরের পরিবার ওই বাড়িতে যেতে পারেনি। তার পর কিশোরকে মেয়ের বাড়িতে আটকে রেখে জাল জন্ম সনদ বানিয়ে কাজি ডেকে বিয়ে নিবন্ধন করে এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ১৩ আগস্ট বিয়ে নিবন্ধিত করেন স্থানীয় কাজি মাহবুবর রহমান।

কাবিননামায় কিশোর বিজয়ের জন্ম সাল দেখানো হয় ১৯৯৯ এবং মেয়ের জন্ম সাল দেখানো হয় ২০০৩। তরুণীর জন্মতারিখ সঠিক থাকলেও কিশোরের জন্ম সনদ যাচাই করে পাওয়া যায় ভিন্ন তথ্য। যে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয়েছে, কিশোরের সেই জন্ম নিবন্ধন নম্বরটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে যাচাই করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিজয়ের নামে তার পরিষদ থেকে কোনো জন্ম নিবন্ধন নেওয়া হয়নি। যে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয়েছে, সেই সনদ নম্বরটি ঠিক আছে, তবে নিবন্ধন নম্বরের বিপরীতে অন্য এক যুবকের নাম ও পরিচয় রয়েছে। স্থানীয় কাজি জানান, তাকে সরবরাহ করা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি দেখেই বিয়ে নিবন্ধন করেছেন। সেটি জাল, তা জানতেন না।

ওই অবস্থায় কিশোরের কোনো সন্ধান না পেয়ে বাবা তারা মিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। কিশোরের নানা কলিম উদ্দিন জানান, নাতিকে উদ্ধারে থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়। উচাখিলা গ্রাম পুলিশের সদস্য মানিকের মাধ্যমে তার চোখের সামনে এএসআই কামরুল টাকা গ্রহণ করেন। এর পর তার বাড়িতে তদন্তে এসে তেল খরচের নামে আরও এক হাজার টাকা গ্রহণ করেন। তারপর তাকে থানায় যেতে বলা হয়। থানায় যাওয়ার পর এএসআই কামরুল তাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে ওসির সঙ্গে কথা হয়েছে। এখন মামলা এফআইআর করে আসামি ধরতে হবে। কিন্তু মামলা এফআইআর করতে টাকা দিতে হবে। এভাবে দফায় দফায় আরও টাকা নেন তিনি।

অপরদিকে এএসআই কামরুল চাপ সৃষ্টি করেন তরুণীর বাবা নুরুল ইসলামের ওপর। ছেলেমেয়েকে থানায় নিয়ে না গেলে তরুণীর বাবার বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে ভয় দেখানো হয়। তরুণীর বাবা আত্মীয়বাড়ি থেকে কিশোরকে থানায় নিয়ে যায়। পরে কিশোরের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এ জন্য তরুণীর বাবার কাছ থেকে নেওয়া হয় ৪ হাজার টাকা। এর পর মেয়েকে আর কিশোরের পরিবার গ্রহণ না করায় থানায় যান যৌতুকের মামলা করতে। মামলার জন্য ৫০ হাজার টাকা চান এএসআই কামরুল।

বিষয়টি গতকাল শনিবার ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানকে জানানো হলে তিনি তাৎক্ষণিক এএসআই কামরুল হাসানকে প্রত্যাহার করে নেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :