ঘরে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে গাইবান্ধার যুবক
আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা;
শাহরিয়ার হোসাইনের (২০), জন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা আবু সাঈদ একটি নন এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। তিনি বেতন-ভাতা পান না। চার সদস্যের সংসার। সহায়-সম্পদ বলতে কিছুই নেই। এক টুকরো সরকারি খাস জমিতে বসবাস। যে প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক সেখান থেকে কোন বেতন পান না। বাবার টিউশনি উপার্জনের একমাত্র ভরসা। তাও করোনার কারণে বন্ধ। সংসার চালানো, তারপর দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ। হিমশিম খেতে হয় তাদের। এই বাস্তবতায় স্থানীয় পত্রিকায় চাকরি নেন শাহরিয়ার। কাজের ফাঁকে ওয়েবসাইট ঘেটে কাজ শেখেন। ওয়েব ডিজাইন ও ডেভলপমেন্ট কাজের প্রতি তার বেশি ঝোঁক ছিল। চেষ্টা করলে সবকিছু অর্জন সম্ভব। তার প্রমাণ শাহরিয়ার। পড়াশোনার পাশাপাশি ঘরে বসেই তিনি ডলার উপার্জন করছেন। বর্তমানে তার মাসিক আয় ৩০-৪০ হাজার টাকা। দুই ভাইয়ের পড়ার খরচ চালানোর পরও সংসারের হাল ধরেছেন।
শাহরিয়ারের বাড়ি গাইবান্ধা জেলা শহরের পূর্বপাড়ায়। বাবা আবু সাঈদ। তিনি সদর উপজেলার খোলাহাটি নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়নি। মা শাহনাজ বেগম গৃহিনী। দুই ভাইয়ের মধ্যে শাহরিয়ার সবার বড়। ছোটভাই আবু সালেহ পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।
শাহরিয়ারের বাবার টিউশনির আয় দিয়ে কোনমত সংসার চলত। অর্থাভাবে দুই ভাইয়ের লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়। এই বাস্তবতায় শাহরিয়ার ২০১৬ সালে স্থানীয় পত্রিকায় কম্পোজের কাজ নেন। এখানে কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়ে নিজের খরচ চলতো। সংসারে সাহায্য করতে পারতেন না। তখন তিনি ভাবতে থাকেন, কিভাবে বাড়তি উপার্জন করা যায়। পড়াশোনা শেষ হয়নি। চাকরির আবেদন করারও সুযোগ নেই। তাই সিদ্ধান নেন ওয়েব ডিজাইন ও ডেভলপমেন্ট এর কাজ করবেন। কথামত কাজ। পত্রিকায় কাজের ফাঁকে ওয়েব ডিজাইন ও ডেভলপমেন্টের কাজ শেখা শুরু করেন। ২০১৯ সালে বাণিজ্যিকভাবে এই কাজ শুরু করেন।
ওই সালে তিনি স্কাই হোস্ট বিডি নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশে ডোমেইন, হোস্টিং সেবা, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপস তৈরি, বাল্ক এসএমএস সার্ভিস দিয়ে আসছেন। স্বল্পমূল্যে এসব সেবার পাশাপাশি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট রিডিজাইন ও আইটি সমাধানের কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি সিঙ্গাপুর, অষ্টেলিয়া, কাতার, পর্তুগাল, লন্ডন, সৈৗদি আরব, জার্মানি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ওয়েব ডিজাইন ও ডেভলপমেন্টের কাজ পাচ্ছেন। বিনিময়ে ঘরে বসেই উপার্জন করছেন ডলার। এসব কাজ করে শাহরিয়ার বর্তমানে মাসিক ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করছেন। তার অধীনে স্থানীয় চারজন বেকার যুবক কাজ করছেন। তারাও এখন স্বাবলম্বী।
শাহরিয়ার গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরে তিনি রংপুর আইডিয়াল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি পলিটেকনিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। এখন তিনি কম্পিউটার টেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় সেমিষ্টারে পড়ছেন। গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছোটবেলা থেকেই শাহরিয়ারের কম্পিউটারের প্রতি বেশ মনোযোগী ছিল। তার স্বপ্ন ছিল আইটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষে পড়াশোনার পাশাপাশি ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ করেন। সে সফল ও হয়েছে।
কলেজছাত্র শাহরিয়ার বলেন, তিনি ইউটিউবে ভিডিও দেখে দেখে ও ঢাকার কিছু বড় ভাইয়ের কাছে পরামর্শ নিয়ে নিজে এসব কাজ শেখেন। ভবিষ্যতে তার স্কাই হোস্ট বিডি প্রতিষ্ঠানটিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চান। তার প্রতিষ্ঠান বৃহৎ পরিসরে পৌঁছলে বেকার যুবকদের চাকরিও দিতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, যারা উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে এসব কাজ শুরু করতে পারছেন না। তারা ইউটিউব ও গুগলের সাহায্যে নিয়ে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন। তবে অবশ্যই তাকে অধ্যবসায়ী ও পরিশ্রমী হতে হবে।

