তেজগাঁও থেকে আব্দুল মালেক নামে এক প্রতারক চক্রের হোতাকে গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক;
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে আব্দুল মালেক (৪২) নামে এক প্রতারক চক্রের হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ জাল কাগজপত্রাদি ও সিল। সাধারণ মানুষকে চাকরী দেওয়ার নামে জাল সনদ-সিল ব্যবহার করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন মালেক। মালেক কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা।
জানা গেছে, র্যাব-৪ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্যের ভিত্তিতে একটি সংঘবদ্ধ পেশাদার চক্র সাধারণ মানুষকে চাকরী দিয়ে এবং চাকরী দেওয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। উক্ত অভিযোগ যাচাই-বাছাই ও সরেজমিনে অনুসন্ধানের আলোকে র্যাব-৪ সিপিএসসি- এর একটি দল সোমবার (১৯ জুলাই) রাতে রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন মনিপুরীপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত জালসনদপত্র ও বিভিন্ন নথিপত্রসহ প্রতারকচক্রের মূলহোতা আব্দুল মালেককে গ্রেপ্তার করা হয়।
উদ্ধারকৃত আলামতসমূহ;
ক। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র- ১টি
খ। ভুয়া জন্মসনদ- ৬০টি
গ। ভুয়া নাগরিকত্ব সনদপত্র- ১৮টি
ঘ। এতিমখানার ভুয়া প্রত্যয়নপত্র- ০৮টি
ঘ। ৫৫ লক্ষ টাকার এফডিআর কপি
চ। ব্যাংক চেক বই- ০৬টি
ছ। সরকারি কর্মকর্তার ভুয়া সিল- ০৬ টি
জ। ক্লিপ চার্ট- ১টি
ঝ। ল্যাপটপ- ১টি
ঝ। কম্পিউটার সিপিইউ- ১টি
ট। প্রিন্টার- ১টি
ঠ। নগদ ২১০৮৫ টাকা
ড। মোবাইল- ১টি।
৩. অন্যান্য তথ্যাদি;
(ক) মোঃ আব্দুল মালেক ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলায় জম্মগ্রহন করে। দাখিল ও আলিম পাশ করে স্থানীয় একটি কলেজ থেকে বি.কম এবং এম.কম ডিগ্রী লাভ করে। সে শিক্ষাজীবন শেষ করে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ী, ফার্মগেট- এ অফিস সহাকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরী পায়।
চাকুরী লাভের পর থেকে চাকরী প্রার্থীদের সাথে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতে থাকে। একপর্যায়ে ২০১০ সালে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে তাকে চাকরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সত্যতা সাপেক্ষে তাকে ২০১৫ সালে চাকরীচ্যুত করে।
(খ) তার প্রতারণার কৌশলসমূহ হলো- নিজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সে এজেন্ট নিয়োগ করে চাকরি প্রার্থীদের সংগ্রহের কাজ শুরু করা, সরকারী চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে সে অধিক সংখ্যক চাকরী প্রার্থী সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে এমবিশন নামে একটি কোচিং সেন্টার চালু করা, চাকরী প্রার্থীদের মধ্য থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কোটা যেমন জেলা কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, এতিম কোটা, আনসার কোটা প্রভৃতি শ্রেণিকরণ করা এবং উক্ত তালিকা অনুযায়ী প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাই করা; স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে টাকা অথবা জমির দলিল জমা রাখার শর্তে চাকরী প্রার্থীদের সাথে সে চুক্তিবদ্ধ হওয়া, চুক্তিশেষে বিভিন্ন মাধ্যম যেমন- লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীর ছবি পরিবর্তন/প্রশ্নফাস প্রার্থীকে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পাশ করানো, নাগরিক সনদপত্র পরিবর্তন, জন্মসনদ পরিবর্তন, চারিত্রিক সনদপত্র, এতিমখানার সনদপত্র, প্রতিবন্ধী সনদপত্র, চেয়ারম্যান প্রত্যয়নপত্র পরিবর্তন সহ যে সব জেলায় অধিক সংখ্যক জনবল নিয়োগে উল্লেখ থাকে জাতীয় পরিচয়পত্রে সে সকল জেলার প্রার্থীর ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করা; কোন চাকরী প্রার্থী চুক্তিবদ্ধকৃত টাকা দিতে না পারলে জমাকৃত জমির দলিলের মাধ্যমে প্রার্থীর জমি দখল করা। এছাড়াও যারা এই প্রক্রিয়ায় চাকরী পেত তাদেরকে জিম্মি করার উদ্দেশ্যে তাদের সব ধরনের কাগজপত্র জমা রাখতো যাতে পরবর্তীতে তাদের কেউ ঝামেলা করলেই তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে চাকুরী পাওয়ার অভিযোগ দিতে পারে।
(গ) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসামী তার কৃত অপকর্মের বিষয়টি স্বীকার করেছে। পলাতক আসামী আব্দুর রাজ্জাক (৫০), আল-আমিন (২৫) এবং অবিনাষ (৩২) সহ তার অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় তার এই প্রতারণার কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, আসামীর ঢাকায় অভিজাত এলাকায় তিনটি ফ্ল্যাট ও ধামরাইয়ে ৮.২৫ শতাংশ জমি। এছাড়াও কুষ্টিয়াতে একটি সুপার মার্কেট, একটি পাকা বাড়ি, ৪টি ট্রাক, একটি বাস ও ২৫ বিঘা জমি রয়েছে।
৪. আইনগত ব্যবস্থা;
তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

