সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত ঘোড়াঘাটের বোরোধান চাষিরা

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৮:৩৬ AM, ০৭ মে ২০২১
smart

Spread the love

লোটাস আহম্মেদ, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি;

বিস্তৃত ফসলের মাঠ। দিগন্ত পেরিয়ে চোখ যতদুর যায়, শুধুই সোনালী ফসলের দোলখেলা। মাঠ জুড়ে বোরোধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার চাষিরা।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে পুরো উপজেলা জুড়ে। তবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ধানের ন্যায্য মূল্যে পাওয়া নিয়ে বেশ সংশয়ে রয়েছেন চাষিরা। পাশাপাশি ধান কাটার শ্রমিক নিয়ে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ধান চাষীদের।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর ঘোড়াঘাট উপজেলায় ১২ হাজার ১৯৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে চলতি মৌসুমে চাষ হয়েছে ৯ হাজার ২৩৩ হেক্টর জমিতে। পাশাপাশি বোরোধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ৪৪৩ মেট্রিক টন।

প্রতি বছর পাশ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর, সাঘাটা ও ফুলছড়ি সহ বেশ কয়েকটি উপজেলা থেকে কৃষি শ্রমিকেরা এসে জমির ধান কাটতো। তবে এ বছর করোনায় দীর্ঘ সময় ধরে লক ডাউনের কারণে কৃষি শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এবং কৃষি অফিস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ধান কাটার শ্রমিক আনা নেওয়ার ব্যবস্থা করলেও করোনার হাত থেকে রক্ষায় অনেক কৃষি শ্রমিক কাজে আসতে অনীহা প্রকাশ করছে। ফলে ধান কাটা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চাষিদের।

উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, আগাম সময়ে যারা বোরোধান রোপন করেছে, সেই সব চাষীরা ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। অনেকে আবার জমিতে কেটে রাখা ধান ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত। তবে অনেক জমিতে দেরী করে ধান রোপন করা হয়েছিল। সেই সব জমির ধান কাটতে সময় লাগবে আরো ২ থেকে ৩ সপ্তাহ। অনেক জমিতে কৃষি শ্রমিকের পরিবর্তে ধান কাটার কাজ করছে অত্যাধুনিক হারভেস্টার মেশিন।

চাষীরা বলছেন, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে খুবই অল্প সময়ে শত শত বিঘা জমির ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষি শ্রমিকের চেয়ে অনেক কম দামে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে এই অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে। কৃষি শ্রমিকের মাধ্যমে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। অপর দিকে হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হচ্ছে মাত্র ৩ হাজার টাকা। এছাড়াও অত্যাধুনিক হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে ধান কাটলে ধান মাড়াই করার আর কোন ঝামেলা থাকছে না। জমি থেকে ধান কেটে সরাসরি ওই মেশিনের মাধ্যমেই সয়ংক্রিয় ভাবে মাড়াই করে বস্তা ভর্তি ধান ঘরে তুলতে সক্ষম হচ্ছে চাষীরা।

ঘোড়াঘাট পৌরসভার কাদিমনগর গ্রামের কৃষক সাব্বির হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে আমি ৫৬ বিঘা জমিতে বোরোধানের চাষ করেছি। ধানের ফসল দেখে আশা করা যায় প্রতি বিঘায় ২৫ থেকে ৩০ মণ ধান উৎপাদন হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এই বছর সকলেরই ধান ফলন হয়েছে। আমি ইতিমধ্যে ধান কাটা শুরু করেছি। প্রায় অর্ধেক জমির ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে এসেছি।

নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ধানের ফলন তো ভালো হয়েছে। তবে ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রি করার সুযোগ পেলে, আমরা স্বার্থক। সরকার প্রতি বছর ন্যায্য মূল্যে ধান কেনার ঘোষণা দেয়। তবে প্রান্তিক পর্যায়ে তার বাস্তবায়ন খুব কম হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে লোকসানে পড়তে হয় আমাদেরকে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইখলাছ হোসেন সরকার জানান, আবহাওয়া সহ বিভিন্ন কারণে এই উপজেলা কৃষি কাজের জন্য বেশ উপযোগী। এই উপজেলার ধান এবং ভুট্টা তুলনামূলক বেশি আবাদ হয়। আশা করা যায় এই বছর বোরোধান চাষীরা ফলন ও দামে বেশ লাভবান হবে। চলতি মৌসুমে আমরা প্রায় ৫ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করেছি। পাশাপাশি কৃষকদেরকে সব সময় সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগীতা প্রদান করে যাচ্ছে আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

আপনার মতামত লিখুন :