পাদুকা ব্যবসায়ী হাসান হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল গাইবান্ধা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি;

গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক দাদন ব্যবসায়ী মাসুদ রানা তার বাড়িতে সুদের কিস্তির টাকার জন্য পাদুকা ব্যবসায়ী হাসান আলীকে টানা এক মাস আটকে রেখে হত্যার প্রতিবাদে গাইবান্ধায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ-সমাবেশ ও এসপি অফিস ঘেরাও কর্মসূচী পালন করেন ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ।

এদিকে, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম নিহত ব্যবসায়ীর কিশোর পুত্র শাফিনের লেখাপড়ার সকল দায়িত্ব নিলেন।

উল্লেখ্য, সোমবার সকাল ১১টায় জেলা শহরের সকল ওষুধ, জুতা,কাপড়ের দোকানসহ মার্কেট-শপিংমল সহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীরা শহরের ডিবি রোডে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচীতে অংশ নেন।

গাইবান্ধা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের উদ্যোগে আসাদুজ্জামান মার্কেটের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সদর থানার ওসিকে অপসারণ ও গ্রেফতার, ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনসহ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি জানানো হয়।

কর্মসূচীতে জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া সংগঠন, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এবং নিহত হাসান আলীর স্ত্রী বিথি বেগম, ছোট ছেলে হেদায়েতুল ইসলাম শাফিন অংশ নেন।

মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে বিক্ষব্ধ লোকজন মিছিল নিয়ে এসপি অফিস ঘেরাও করেন। এসময় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম মতবিনিময় করেন। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ২৪ ঘন্টার মধ্যে উল্লেখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের দাবি জানান। অন্যথায় তারা হরতালসহ লাগাতার নানা কর্মসূচী পালন করবে বলে আল্টিমেটাম দেন।

পুলিশ সুপার তাদের বক্তব্য শোনেন এবং গঠিত তদন্ত কমিটি কতৃক তদন্তপূর্বক রিপোর্ট প্রাপ্তির পর দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন ও দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। এ সময় পুলিশ সুপার নিহত ব্যবসায়ী হাসান আলীর কিশোর পুত্র হেদায়েতুল ইসলাম শাফিনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন।

প্রসঙ্গত; যে চেম্বার সভাপতি শহিদুল ইসলাম শান্ত – এর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে ও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, রাজনীতিক আমিনুল ইসলাম গোলাপ, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ শরিফুল ইসলাম বাবলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়নুল ইসলাম রাজা, মিহির ঘোষ, গোলাম মারুফ মনা, জিয়াউল হক জনি, মনজুর আলম মিঠু, কাজী আবু রাহেন শফিউল্যাহ খোকন, গোলাম রব্বানী, জেলা যুবলীগ সভাপতি সরদার মো. শাহীদ হাসান লোটন, গাইবান্ধা চেম্বারের সহ-সভাপতি মোস্তেক আহমেদ রঞ্জু, ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সভাপতি আব্দুর রশিদ সরকার, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি রেজাউন্নবী রাজু, গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ দাশ দিপু, জেলা ব্যবসায়ী সমন্বয় সমিতির সভাপতি ইকবাল আহমেদ, মাইক ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া, পাদুকা ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সভাপতি আলিম মিয়া, জেলা দোকান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল সাহা, সাবেক ছাত্রনেতা আরিফুল ইসলাম চৌধুরী শাহীন প্রমুখ।

বক্তারা, হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত, দাদন ব্যবসায়ী আ’লীগ নেতা মাসুদ রানার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে সদর থানার ওসি মাহফুজুর রহমানকে গ্রেপ্তার, ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। দাবি আদায় না হলে জেলায় সর্বাত্মক হরতালের হুশিয়ারী দেন বক্তারা।

এদিকে, হাসান আলী নিহতের ঘটনার মামলায় দুই পুলিশ সদস্যের গাফিলতির অভিযোগ এনে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা রানার চারদিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

উল্লেখ্য, গাইবান্ধা জেলা শহরের খানকা শরীফ সংলগ্ন নারায়নপুর এলাকার জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সমপাদক কুখ্যাত দাদন ব্যবসায়ী মাসুদ রানার বাড়ী থেকে শনিবার সকালে হাসান আলী (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ীর ফাঁসিতে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পাদুকা ব্যবসায়ী এবং আফজাল সুজ গাইবান্ধা শাখার সাবেক মালিক নিহত হাসান আলী শহরের থানাপাড়া এলাকার মৃত হজরত আলীর ছেলে।