গোবিন্দগঞ্জে ছাড়পত্র ও লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ইটভাটা
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;
তালিকা অনুযায়ী গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা রয়েছে ৩৪টি। তবে তালিকার বাহিরেও রয়েছে প্রায় ১০/১২টি ইটভাটা। তথ্যনুযায়ী ওইসব ভাটার মধ্যে দুটি ভাটার বৈধ কাগজপত্র থাকলেও অন্য ভাটাগুলোর নেই কোন বৈধ কাগজপত্র। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনকে ম্যানেজের নামে ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম,এস,বি ভাটার স্বত্ত্বাধিকারী জাহেদুল ইসলাম ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে প্রতিটি ইটভাটা হতে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন।
ইটভাটায় নিম্নমানের জ্বালানী ও অনুপযুক্ত চিমনী ব্যবহারের কারণে পরিবেশ দূষণের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। ইটভাটার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে ছাই, ধূলা ও সালফার- ডাই-অক্সাইডসহ ক্ষতিকর গ্যাস। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া নিয়ম না মানা এসব ব্যবসায়ীরা ইট তৈরীতে কৃষি জমির ঊর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। এরফলে একদিকে যেমন জমির শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে অন্যদিকে কমে যাচ্ছে আবাদী জমি। অনেক কৃষক নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে পুকুর খনন করে ভাটা মালিকদের কাছে তিন ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে করে শস্যহানী, ঘাতক পদার্থে মরচে সৃষ্টি, ভূমিক্ষয়, ভূমিধস ও ভূমির ঊর্বরতা হ্রাসে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ইট পোড়ানো জন্য কাঠ ব্যবহারে গাছ কমে যাওয়ায় পরিবেশের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান বেড়ে যাচ্ছে, যা আমাদের পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য ভয়াবহ ভবিষ্যৎ ডেকে আনতে পারে।
উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়নের চক সিংহডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কয়েকশ’গজ দুরেই রয়েছে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক। আর মহাসড়কের ৪১ মাইল নামকস্থানে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে এ,পি,এস নামের ইটভাটা। ওই ইটভাটার স্বত্ত্বাধিকারী আতিকুর রহমান আতিক তালুককানুপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে এ,পি,এস ভাটার স্বত্ত্বাধিকারী চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিকের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভাটার সব কাগজপত্র আছে। তবে একটি কাগজ কম থাকায় সম্প্রতি রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তর ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, মহাসড়কের পাশেই চক সিংহডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে ভাটার ট্রাক্টর, ট্রলি নিয়মিত মাটি পরিবহন করছে। তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও আগামী ৩০ মার্চ প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে স্কুলে আসা কোমলমতি শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। রয়েছে দুর্ঘটনার আশংকাও। তাছাড়া চেয়ারম্যান প্রভাবখাটিয়ে গ্রামের মধ্যে কৃষি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে তুলেছে ইটভাটা।
ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার ফাঁসিতলা দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও ফাঁসিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ২০০/৩০০ গজ দুরেই গড়ে তোলা হয়েছে এম,এস,বি ও বি,বি, এস ব্রিকস্ মার্কা ইটভাটা। এছাড়া ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানা হতে কয়েকশ’ গজ দুরে অবস্থিত এম,এস,বি মার্কা ইটভাটা। এম,এস,বি ইটভাটার স্বত্ত্বাধিকারী হলেন ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম,এস,বি ভাটার স্বত্ত্বাধিকারী জাহেদুল ইসলাম বলেন, ইটভাটাগুলো কিভাবে চলছে তার জবাব প্রশাসন দেবেন। এ বিষয়ে তথ্য চাইলে আপনারা প্রশাসনের কাছে যান।
এম,এস,বি ভাটার স্বত্ত্বাধিকারী তাহেদুল ইসলাম বলেন, ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা তা প্রশাসন দেখবে। আপনারা দেখার কে? অপর দিকে, ইউ,এস,বি ব্রিকস্- এর স্বত্তাধিকারী মানিক মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সবাই বেভাবে ইটভাটা চালাচ্ছে আমাদেরটাও সেইভাবে চলছে। কমিটির লোকজন এসব দেখভালের দায়িত্বে আছে। আপনারা তাদের সাথে কথা বলুন।
শুধু তাই নয় উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের পুনতাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পুনতাউড় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোল ঘেঁসে গড়ে উঠেছে মেসার্স লিপ্ত এন্ড আরিশা ব্রিকস্। প্রায় দুই বছর ধরে ওই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই ইট পোড়ানোর ফলে পরিবেশ দূষণসহ মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। এমনিভাবেই বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই গোটা উপজেলায় চলছে প্রায় অর্ধশত ইটভাটা।
রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, রংপুর বিভাগে ৮টি জেলার মধ্যে মাত্র দুটি অফিস রয়েছে। দুই অফিস ৮টি জেলা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। লোকবল কম থাকায় অভিযানে বিলম্ব হচ্ছে। তবে খুব শিগগিরি গোবিন্দগঞ্জে অভিযান পরিচালিত হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ম্যানেজের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার জানা মতে কয়েকটি ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র আছে। অন্যসব ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই। এসব ইটভাটার লাইসেন্স জেলা প্রশাসক দিয়ে থাকেন। এরপরও উপজেলা প্রশাসন দায় এড়াতে পারেনা। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

