করোনাকালেও সক্রিয় মাদক কারবারীরা, এক বছরে অর্ধ কোটি টাকার মাদক জব্দ

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৫:২৭ PM, ২৪ জানুয়ারী ২০২১

Spread the love

লোটাস আহম্মেদ, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি;

গত ২০ সালের শুরু থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিল চলমান মহামারী করোনা ভাইরাস। সারা বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো করোনার আক্রমনে থমকে গিয়েছিল। বাংলাদেশও ছিল না তার ব্যতিক্রম। করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষায় যথাসম্ভব ঘর বন্দি হয়ে থাকতে হয়েছিল সারা দেশের মানুষকে। বাধাগ্রস্থ হয়েছিল মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন। তবে চলমান করোনা ভাইরাস কালে থেমে ছিল না মাদক কারবারীদের কোন কার্যক্রম।

গত ২০২০ সাল জুড়ে কেবল মাত্র দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থানা থেকে প্রায় ৫৫ লাখ ১৭ হাজার টাকার মাদক জব্দ করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। এরমধ্যে পুলিশ ৩০ লাখ ৩১ হাজার টাকার বিভিন্ন মাদকদ্রব্য জব্দ করে। আর ২৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকার মাদক জব্দ করে র‌্যাব-১৩ ব্যাটালিয়নের দিনাজপুর ও গাইবান্ধা ক্যাম্প। সব থেকে বেশি উদ্ধার করা হয়েছে ফেনসিডিল। বছরজুড়ে প্রায় অর্ধ লক্ষ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জব্দ তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইয়াবা। প্রায় ১৯শ পিছ ইয়াবা জব্দ করা হয়।

ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ ও র‌্যাব-১৩ ব্যাটালিয়নের (রংপুর) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ সাল জুড়ে ঘোড়াঘাট থানা এলাকা থেকে ফেনসিডিল জব্দ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৫৬ বোতল। যার বর্তমান বাজার মূল্যে ৪৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ইয়াবা জব্দ হয়েছে ১৮৭৬ পিস। যার বাজার মূল্যে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গাঁজা জব্দ হয়েছে ৫ কেজি এবং হেরোইন ৮ দশমিক ৪১ গ্রাম। এই দুটি মাদকের মূল্যে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। অপর দিকে, দেশী মদ জব্দ হয়েছে ৬৭ লিটার এবং অ্যাস্পল জব্দ হয়েছে ৪০ পিস। যার বর্তমান বাজার মূল্যে প্রায় ২৭ হাজার টাকা।

ফেনসিডিল উদ্ধারের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২৫টি মামলায় ৩৮ জনকে আসামী করে। তারমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ৩৫ জন। ইয়াবা উদ্ধারে ৫৮টি মামলায় আসামী হয়েছে ৮৪ জন। গ্রেপ্তার হয়েছে ৭৬ জন। হেরোইন উদ্ধারে ৭টি মামলায় আসামী ১২ জন। গ্রেপ্তার ৯জন। গাঁজা উদ্ধারে ১৬টি মামলায় ২৭ জনকে আসামী করা হয়। গ্রেপ্তার ২৬ জন। চোলাইমদ উদ্ধারে ৫টি মামলায় ৬ জনকে আসামী করা হয়েছে। ফেনসিডিল চোরাচালান সংক্রান্ত ১২টি মামলায় আসামী করা হয়েছে ২৫ জনকে। গ্রেপ্তার ২১ এবং অ্যাম্পল উদ্ধারে ১টি মামলায় ১ জনকে আসামী করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযান এবং মাদকের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকায় গত ২০১৯ সালের তুলনায় গত ২০ সালে মাদক কারবারীদের আনাগোনা কম হবার কথা থাকলেও করোনার প্রাদূর্ভাবে তা বেড়ে গিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, চলমান করোনা ভাইরাসের আক্রমনে গত বছরের শুরুর দিক থেকে জনগণকে সচেতন করা সহ অতি জরুরী কাজ ছাড়া ঘরের ভিতরে আবদ্ধ থাকতে মূল ভুমিকা পালন করতে হয়েছে প্রশাসনকে। এছাড়াও করোনায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রশাসনের আভিযানিক কার্যক্রমেও পালন করতে হয়েছে বিশেষ সর্তকতা। সব মিলিয়ে করোনাকালে বেশ সরব হয়ে উঠেছে মাদক কারবারীরা। আর এই সময়ে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ী।

ঘোড়াঘাট থানার ধার ঘেঁষেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দুটি সীমান্ত। একটি দিনাজপুরের হিলি (হাকিমপুর)। অপরটি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি। তাই মাদক পাঁচারের প্রধান রুট হিসেবে কারবারীদের মূল টার্গেট ঘোড়াঘাট থানা। ট্রাক ভর্তি পাথর, ভুট্টা ও পেঁয়াজ সহ বিভিন্ন পণ্যে সরবরাহের আড়ালে মাদক কারবারীরা প্রতিনিয়ত মাদক পাঁচারের চেষ্টা করে।

নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য জব্দ ও মাদক কারবারীদেরকে গ্রেপ্তার করে মামলা দিলেও, তারা দ্রুত সময়ে আদালত থেকে জামিন পাওয়ায় জেল থেকে বের হয়ে আবারও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। যার ফলে কোন ভাবেই তাদেরকে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ ও র‌্যাব বলছে, মাদক মামলার আসামীদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালত কঠোরতা অবলম্বন করলে এবং অপরাধ অনুযায়ী যথা সময় জেলে থাকলে মাদক সংশ্লিষ্ট মামলার আসামীরা সংশোধন হওয়ার সুযোগ পেত। দ্রুত সময়ে জামিন পাওয়ায় তারা সংশোধনের সুযোগ পাচ্ছেনা। ফলে মাদক কারবারীদেরকেও রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

র‌্যাব-১৩ ব্যাটালিয়নের দিনাজপুর ক্যাম্পের (ভারপ্রাপ্ত) কোম্পানী কমান্ডার এএসপি আহসান হাবিব জানান, ঘোড়াঘাটের পার্শ্ববর্তী থানা হাকিমপুরে ভারতীয় সীমান্ত ঘেষেঁ বেশ কিছু মাদকের কারখানা রয়েছে। এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত পরিমান গোয়েন্দা তথ্য থাকলেও সীমান্তবর্তী এলাকায় এসব কারখানা হওয়ায় সেখানে অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। মাদক কারবারীদের ব্যাপারে র‌্যাবের গোয়েন্দারা নিয়মিত কাজ করছে এবং গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারীদের গ্রেপ্তার এবং সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করে যাচ্ছেন তারা।

এ দিকে ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের নিয়মিত অভিযানে কিছুটা কোণঠাঁসা হয়ে পড়েছিল মাদক কারবারীরা। তবে করোনাকালে তারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আমি যোগদান করার পর সেপ্টেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় ১৮লাখ টাকার মাদক জব্দ করেছি। এসপি স্যারের নির্দেশনায় মাদক কারবারীদের ব্যাপারে আমরা বিশেষ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যার প্রয়োগ ইতিমধ্যে করা হয়েছে। মাদক সংক্রান্ত মামলা গুলোতে এখনও পর্যন্ত ৯৮ ভাগ আসামীকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। মাদক নির্মূলে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।

আপনার মতামত লিখুন :