লাখাই কৃষ্ণপুর গনহত্যা দিবস পালিত
লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি; লাখাই কৃষ্ণপুর গনহত্যা দিবস পালিত হয়েছে, গনহত্যায় ১২৭জন শহিদের সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি।
হবিগঞ্জের হাওরাঞ্চল বেষ্টিত লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর গণহত্যা’ দিবস -২০২৩ উপলক্ষে ১২৭ জন শহীদদের স্মরণে গ্রামবাসী ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচির আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়েছে।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর ) কৃষ্ণপুর গ্রামবাসী সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিস্তম্ভে জাতীয় পতাকা ও কালো পতাকা উত্তোলন করে । সকাল ১১ টায় লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর স্মৃতিসৌধের সামনে এক আলোচনা সভা লাখাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার( ইউ,এন,ও) নাহিদা সুলতানার সভাপতিত্বে ও শিক্ষক অসিত রঞ্জন দাশের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় । এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল মনসুর।বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন , লাখাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুনু মিয়া, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গৌর প্রসাদ রায়, কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা অমরেন্দ্র লাল রায়, প্রদীপ কুমার রায়, স্বজন গ্রাম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইন চার্জ মোঃ মোরশেদ আলম ।
১৯৭১ সালের ১৮ ই সেপ্টেম্বর এই দিনে উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত গ্রাম কৃষ্ণপুর গ্রামবাসীর উপর চালানো হয় নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ। সেই সঙ্গে চলে ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট রেহাই পাননি নারী পুরুষ শিশু সহ নিরীহ গ্রামবাসী লাইন দাঁড়িয়ে কষ্ণপুর একটি স্কুল সংলগ্ন দারগাবাবুর বাড়িতে ১২৭ জন নারী-পুরুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে ব্রাশফায়ার হত্যা করে উল্লাসে মেতে উঠেছিল পাকিস্তানী রাজাকার বাহিনীর দল। সেই সঙ্গে অনেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ পঙ্গুত্বও বরণ করে।জানা যায় ১৯৭১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাজাকাররা কৃষ্ণপুর গ্রামে গনহত্যা সংগঠিত করার উদ্দেশ্য কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার পাকিস্তানী ক্যাম্পে জড়ো হয়।
১৭ সেপ্টেম্বর রাজাকাররা রাতে নৌকা, নিয়ে গ্রামটি ঘিরে ফেলে।১৮ সেপ্টেম্বর ভোর একটি স্পিডবোট সহ, ১০/১২টি নৌকা নিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে যোগ হয়ে স্থানীয় একদল রাজাকার-আলবদর বাহিনী কৃষ্ণপুর গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালায়। গ্রামে ঢুকে একটি দল গুলি ছুঁড়তে শুরু করে অন্য দলটি নৌকা পাহারা দিতে থাকে। তারা কোন কোন -বাড়িতে গিয়ে যুবতীদের ধর্ষন করে এবং বন্দুকের মুখে গ্রামবাসীদের নগদ টাকা পয়সা এবং স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়।যাবার পথে সৈন্যরা সারা গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়। অসহায় নিরস্র হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী পুরুষকে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করা হলে ১২৭ জন সঙ্গেসঙ্গেই নিহত হয়। বুলেটের আঘাতে জর্জরিত হয়েও হয়ে প্রাণে বেঁচে যান হরিদাশ অজ্ঞাত ৩ জন ।
২০১০ সালের ৪ মার্চ বেঁচে যাওয়া হরিদাস রায় হবিগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মুড়াকরি গ্রামের রাজাকার লিয়াকত আলী এবং অন্যান্য রাজাকারদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।২০১০ সালের ১২ আগষ্ট কৃষ্ণপুর গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধের প্রথম মামলা হিসেবে সিলেট বিভাগ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গৃহীত হয়।
লিয়াকত আলী ও রজব আলীর বিরুদ্ধে ৭ অভিযোগে বিভিন্ন ধারায় হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও লুটপাটের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। ” আমি আল বদর বলছি” বইটিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত স্পেশাল ট্রাইবুনালে সম্পূরক তথ্য ও উপাত্ত হিসেবে আমলে নেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অষ্টগ্রাম থানার আলবদর নেতা আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী ও লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করেন।গত ৩ জুলাই ২০২২ ঢাকা কলাবাগান এলাকা থেকে আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীকে গ্রেফতার করে র্যাব-২ ।
অন্যদিকে রাজাকার লিয়াকত আলী পালিয়ে গেছে আমরিকায়। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও এ জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞের ঘটনাটি অনেকে জানেন না। এ হত্যাযজ্ঞে শহীদদের নাম সরকারিভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। এ গণহত্যার সরকারি স্বীকৃতি দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।

