হবিগঞ্জে সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে নয়ছয়

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৭:৩৪ PM, ১৯ মার্চ ২০২৩

Spread the love
আজিজুল হক সানু, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি;
বানিয়াচংয়ের চতুর্দিকে ঐতিহাসিক গড়ের খাল অপরিকল্পিতভাবে খনন করায় সরকারের দেয়া ৮কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ পুরোটাই ভেস্তে যেতে বসেছে। প্রতিরক্ষা দেয়াল ও সীমানা নির্ধারণ না করেই এই খালটি পুর্নখনন করায় পুনরায় আগের চেহারায় ই ফিরে যাবে বলে মনে করছেন বানিয়াচংবাসী।
সুত্র জানায়,বানিয়াচংয়ের চতুর্পাশে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৩১.৬ কিলোমিটার গড়ের খাল পুনর্খনন করার টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পাদন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পায় নেত্রকোনা জারিয়া বাজারের অসীম সিংহ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
গত ২৮ জানুয়ারি এই খাল পুনর্খনন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান। তারপরই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা তড়িগড়ি করে গড়ের খালে এক্সেভেটার দিয়ে মাটি খনন শুরু করে।
খালের গভীরতা,প্রসস্থ,গাইড ওয়াল না দিয়ে এমনকি সীমানা নির্ধারণ না করেই নামকাওয়াস্তে খনন করতে থাকে। সদরের ৩নং ইউনিয়নের শরীফ উদ্দিন রোডের পাশে গড়ের খালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালের উভয় পাশে মাটি ভরাট করে রাখার পর সেই মাটি পুনরায় একই জায়গায় গিয়ে পড়ছে।
কোথাও কোথাও জমা করে রাখা মাটির স্তুপ রয়েছে উচু অথবা নিচু। গাইড ওয়াল না দিয়ে খাল খনন করায় অধিকাংশ জায়গায় উভয় পাশের মাটি নেমে পড়েছে।
প্রতিরক্ষা দেয়াল ছাড়া গড়ের খাল পুনর্খনন করায় সুফল পাচ্ছেনা বানিয়াচংবাসী। অল্প বৃষ্টি হলেই খালের দুই পাশের মাটি ভেঙ্গে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় মাটি নেমে গেছে।
ভূমিখেকোদের দখলে থাকা খালের অনেক সরকারি জায়গা দখলমুক্ত না করেই লোক দেখানো পুনর্খনন করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় খালের মাটি খালেই ফেলা হচ্ছে। এভাবে খাল পুনর্খননের ফলে রাষ্ট্রের টাকা অপচয় হবে। অবৈধ দখলদাররা লাভবান হবে এবং খালের সীমানা কমে খাল আরও সরু হয়ে যাবে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বানিয়াচংবাসী।
লোক গবেষক আবু সালেহ আহমদ ডিবিসি নিউজকে বলেন,যেভাবে খাল খনন করা হচ্ছে এভাবে খনন করার কোনো মানে হয়না। তারপর সীমানা নির্ধারণ, খালের গতিপথ পরিবর্তন করে এ খনন বানিয়াচংবাসীর কোনো কাজে আসবেনা।
ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম খান বলেন, সীমানা প্রাচীর না দিয়েই খাল খনন! পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের মতো রেগুলার প্রজেক্টে রুপান্তরিত হবে। জনভোগান্তি আরও বাড়বে।
হবিগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি প্রয়াত শরীফ উদ্দিন আহমেদ এর পুত্র নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন শরীফ রাসেল বলেন-বানিয়াচং গড়ের খাল পুনরায় খনন হবে শুনে সবার সাথে সাথে আমিও খুব আনন্দিত হয়েছি। সাথে সাথে শঙ্কা ছিল কাজটি সঠিকভাবে হবে কিনা কারণ, বাংলাদেশে বেশির ভাগ কাজে পরিকল্পনার অভাব।
খবরে দেখলাম রক্ষা দেওয়াল ছাড়া খাল খনন হচ্ছে। আমার কাছে তার চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে প্রথমে সীমানা নির্ধারণ করে খালের শতভাগ জায়গা দখল মুক্ত করা এবং সাথে সাথে প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা। শুধু নামে মাত্র খাল খনন করলে বেশী দিন যাবেনা খালটি আগের অবস্থায় চলে আসবে এবং জনগণের টাকা নষ্ট হওয়া ছাড়া কাজে আসবে না।
তাই সবার আগে প্রয়োজন খালের সীমানা নির্ধারণ এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী খনন যাতে করে ভবিষ্যতে খালকে কেন্দ্র করে অনেক কিছু করা যায়। খালকে ভবিষ্যৎ উপযোগী করে তোলার জন্য খালের গভীরতা এবং প্রশস্ততা খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে শীতকালে পানি দরে রাখার জন্য। যদি খালটি প্রশস্ত হয় এবং গভীরত্ব থাকে তাহলে এই খালকে কেন্দ্র করে অনেক কিছু করা যাবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অসীম সিংহের স্বত্ত্বাধিকারী কয়েকদিন পূর্বে মারা যাওয়ায় বিষয়টা নিয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানের খাল খনন দেখভালোর দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারি প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বাবুল জানান,খাল খননের কাজ এখনো চলমান রয়েছে।
তবে জায়গা অনুযায়ী একেক জায়গায় একে ধরণের মাপ দিয়ে খনন করা হচ্ছে। শিডিউলে আসলে কতো ফুট প্রস্ত কতো ফুট দীর্ঘ বা গভীরতা কতো ফুট করতে হবে সেইটা উল্লেখ নেই।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী জানান,সীমানা নির্ধারন করে তারপর খাল খনন করাটা যৌক্তিক ছিল। বিষয়টা নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে ও কথা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প যারা বাস্তবায়ন করছে তারা এটা না করেই খাল খনন করে যাচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গড়ের খালের সীমানা নির্ধারণ করা আছে। যেখানে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জায়গা রয়েছে সেখানে খনন কাজ একটু খেরফের হয়েছে।
কিছু জায়গায় ঠিকমতো করা হয়নি সত্য। ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গাতে আমরা যদি কাজ করতে যাই তাহলে তো তাদের সাথে সমস্যা বাঁধবে। আর কাজের সিডিউলে প্রতিরক্ষা দেয়াল নাই। শুধুমাত্র খনন। ৪ থেকে ৭ মিটার সাথে বেড হিসেবে খনন করা হচ্ছে। ফুট হিসেবে ধরতে পারেন ২১/২২ এমনকি ২৩ ফুট হবে।

আপনার মতামত লিখুন :