সাঁওতাল হত্যা দিবস উপলক্ষে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সভা
অজয় চাকী, গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি;
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বহুল আলোচিত তিন সাঁওতাল হত্যা দিবস উপলক্ষে বিক্ষোভ র্যালী ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৫ নভেম্বর) উপজেলার সাহেবগঞ্জ ইক্ষুখামার এলাকায় বেলা ১২ থেকে এ প্রতিবাদ সমাবেশ করেন সাঁওতালরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে সহ¯্রাধিক নারী-পুরুষ ব্যানার, ফেস্টুনসহ তীর ধনুক হাতে সমাবেশে অংশ নেয়। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির একাংশের আয়োজনে উক্ত বিক্ষোভ র্যালী ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বার্নাবাস টুডু।
প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিষ্টার জ্যোর্তিময় বড়–য়া। এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন, অত্র কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, সদস্য সাধনা মোহল, অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম মামুন, জয়পুরহাটের অ্যাডভোকেট বাবুল রবিদাস, রংপুরের অ্যাডভোকেট রায়হান কবির, রংপুর রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বকারী কবি ও লেখক প্রভাষক চিনু কবির, সিপিবি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম, কাটাবাড়ী গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছামিউল আলম রাসু, আদিবাসী গবেষক কেরিনা হাসদা, আদিবাসী নেত্রী রুমিলা কিসকু ও রাফায়েল হাসদা প্রমুখ। এর আগে একটি বিক্ষোভ র্যালী গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশে অংশ নেয়।
বক্তারা বলেন, তিন সাঁওতাল হত্যাকা-ের ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। জড়িতদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বিচারের নামে কালক্ষেপন করা হচ্ছে। আদালতে বার বার জুডিসিয়াল তদন্ত চাওয়া হয়েছে। কিন্তু অদ্যবধি তা দেওয়া হয়নি। যারা হত্যার সঙ্গে জড়িতে তাদেরকেই তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রভাবশালীদের বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দিচ্ছে পুলিশ। এ ঘটনার সঙ্গে পুলিশ নিজেরাই জড়িত ছিল। তাহলে তারাই কিভাবে তদন্ত করে। এতে করে হত্যাকা-ে জড়িতদের পক্ষেই চলে যাচ্ছে।
এর আগে জুডিসিয়াল তদন্তে বসতবাড়ীতে অগ্নিসংযোগকারী কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছিল। চাকরী থেকে সাসপেন্ড করা হলেও পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে আবারো তারা বহাল থেকেছে।
অনতিবিলম্বে হত্যাকা-ের জড়িতেদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ক্ষতিপূরণ, সাঁওতালদের নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও জমি ফেরতের দাবী জানান বক্তারা।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সাঁওতালরা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের ওই জমি তাঁদের বাপ-দাদার দাবি করে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি আন্দোলন গড়ে তোলেন। জমি উদ্ধারে গঠিত হয় সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। শুরু হয় নানা কর্মসূচি। ওই বছরের ৬ নভেম্বর আখ কাটার নামে উক্ত জমি দখল করতে গেল চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে সাঁওতালদের ৩ জন নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এই দিনকে সাঁওতাল হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছে ভুক্তভোগীরাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।

