সরিষার মধ্যেই ভূত, প্রশাসনের যোগসাজশেই চলছে বালু উত্তোলন

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৯:৪৭ AM, ০৯ মার্চ ২০২২

Spread the love

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে প্রশাসনের যোগসাজশে উপজেলার করতোয়া (কাটাখালী) নদী থেকে বালু তোলার অভিযোগ উঠেছে। বালু ব্যবসায়ীদের দাবী তারা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাসোহারা দিয়েই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের চক রহিমাপুর (কামারপাড়া), চক রহিমাপুর (উত্তরপাড়া), সাহেবগঞ্জ মেরী, ফকিরগঞ্জ, নরেঙ্গাবাদ, গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের কাইয়াগঞ্জ, তালুককানুপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর, সমসপাড়া, পৌর এলাকার খলসি মিয়াপাড়া, বালিয়ামারি, বোয়ালিয়া, বোয়ালিয়া নামকস্থানে এক লাখ বত্রিশ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ পোলের একশ’ গজ দুরেই বসানো হয়েছে ড্রেজার মেশিন, হাওয়াখানা, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের কাটাখালী সেতু-সংলগ্ন এলাকা, দরবস্তের বগুলাগাড়ী, পলুপাড়া ব্রিজ এলাকা, রাখালবুরুজ ধর্মপুরবাজার সংলগ্ন এলাকা, বড়দহ সেতু এলাকা, মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বালুয়া, দেওয়ানতলা সেতু এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে করতোয়া নদীতে অর্ধশত ড্রেজার (বোমা) মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে। এতে নদীর গঠন প্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে। পরিবেশের সঙ্গে হুমকীর মুখে ফসলি মাঠ, বসতভিটা, ভেঙে যাচ্ছে নদী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহবায়ক এম এ মতিন মোল্লা বলেন, করতোয়া নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র বালু তুলে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। যত্রতত্র অবৈধভাবে বালুতোলার কারণে ফসলি জমি, বসতভিটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। বালু উত্তোলন বন্ধে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছেনা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা বালু স্পটগুলো থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে থাকেন। ফলে মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনার করে প্রশাসন। যে কারণে অভিযানেও বন্ধ হয়না বালু উত্তোলন। চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুল ও তার শ্বশুর সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে চক রহিমাপুর (কামারপাড়া) এলাকায় বালু উত্তোলন চলমান রয়েছে।
জানতে চাইলে সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুলের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আরিফ হোসেনের ভাষ্য, বালু তোলা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু অভিযানে গেলে বালু ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে বালু তোলা বন্ধ করতে না পারলে মানুষ সেটা ভাবতেই পারে। তবে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

চকরহিমাপুর (কামারপাড়া) এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে প্রশাসন পেীঁছাবার আগেই বালুদস্যুরা খবর পেয়ে যায়। ফলে প্রশাসনের লোকজন গিয়ে কাউকে না পেয়ে ফেরত চলে যান। আবারো চলে বালু উত্তোলন।

সাপমারা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শামিম রেজা মন্টু অভিযোগ করেন, তিনি বলেন, প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে এবং সবসময় যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তবুও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা। বালু জব্দ না করে প্রশাসন মাঝে মধ্যে কিছু পাইপ ও মেশিন ভেঙে চলে যায়। বালু জব্দ করে নিলামে বিক্রি করা হলেই বালুতোলা বন্ধ হবে বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল শেখ সুমনের নেতৃত্বে পৌর শহরের বুজরুক বোয়ালিয়া এলাকায় বালু তোলা হয়। শেখ সুমন বলেন, বালু স্পট ভরাট করা ছিল, সেগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এরপর আর বালু তুলবেন না বলে জানান তিনি। এদিকে, চক রহিমাপুর (গুচ্ছগ্রাম) সংলগ্ন এলাকায় শ্রমিক নেতা আবু নাঈম সহ কয়েকজন ব্যক্তি কৃষকদের কাছ থেকে অল্পমূল্যে কৃষি জমি কিনে চড়া দামে মাটি বিক্রির ব্যবসা করে আসছেন। ভেকু (্এক্সক্যাভেটর) দিয়ে রাতে ড্রাম ট্রাকে করে মাটি কেটে তারা বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে।

আবু নাঈম বলেন, প্রশাসনের কারণে কিছুদিন বন্ধ ছিল। তবে আবারো ব্যবসা চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের চকরহিমাপুর (উত্তরপাড়া) এলাকায় মোস্তফা ও তাহেরের নেতৃত্বে একইস্থানে ৬টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বালু ব্যবসায়ী মোস্তফা বলেন, প্রশাসন সহ সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেই আমরা বালু উত্তোলন করে আসছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে অনেকে আমাকে ফোন দিয়েছেন। তালিকা করে স্পটগুলোতে খুব শিগগিরি অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, গোবিন্দগঞ্জে বালু মহাল করা হবে। যেন সেখান থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়।

আপনার মতামত লিখুন :