সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত; গোবিন্দগঞ্জে ৪ লেনের মহাসড়কের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী 

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০২:০৭ PM, ০৬ এপ্রিল ২০২১

Spread the love

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ৪ লেনের বিশ্বরোডের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কনস্ট্রাকশন সেভেন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন দরপত্রের চুক্তি মোতাবেক কাজ না করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে।

জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কনস্ট্রাকশন সেভেন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন (সিএসসিইসি) টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল থেকে রংপুরের মডার্ণ পর্যন্ত শুরু করে। বর্তমানে ওই প্রকল্পের কাজ গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় চলছে। নিয়মানুযায়ী সড়ক নির্মাণে এ গ্রেডের বালু ব্যবহারের কথা থাকলে সেটি মানা হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, বালু মহাল থেকে বালু সংগ্রহের কথা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু বালু মহাল থেকে বালু সংগ্রহ না করে স্থানীয় আবাদী ও নদীর নিম্নমানের বালু কমদামে ক্রয় করে তা নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বালু মহাল থেকে বালু নেওয়া হলে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেতো, সেই সাথে বালুর মানও ভালো হতো।

ইটের খোয়ার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, এখানে ১ নং ইট ব্যবহার না করে ২ নং ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, চায়না কোম্পানী স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ ধরণের নিম্নমানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক আবদুল মতিনের যোগ সাজশে কোম্পানীর বাংলাদেশের প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) জিয়াউল হায়দার নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে এ বৃহৎ সড়কের স্থায়ীত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক শ্রমিক বলেন, কাজে অনেক অনিয়ম হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। আমাদের তো কিছুই করার নেই। কর্তৃপক্ষ যেভাবে সামগ্রী সাপ্লাই দেবেন, আমরা সেভাবেই কাজ করে যাবো। এসব অনিয়মের বিষয়ে বলতে গেলে তো আমাদের চাকরী থাকবে না।

জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) জিয়াউল হায়দার বলেন, এখানে রাজস্ব ফাকির কি আছে? আমরা তো সঠিক মূল্য দিয়ে কৃষকের কাজ থেকে মাটি সংগ্রহ করতেছি। এসব বলে কোন লাভ নেই। আপনাদের যা করার সেটাই করুন।

অপর দিকে, প্রজেক্টে বালু, মাটি সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা আল আমিন নামের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, আমার কাজই হলো- বালু, মাটি সংগ্রহ করা। যেখান থেকেই হোক আমাকে তা সংগ্রহ করতে হবে। কৃষক যদি আমাদের কাছে মাটি বিক্রি করে তাহলে আমাদের কি করার আছে। বালু, মাটি সংগ্রহ করতে না পারলে আমার চাকরী থাকবেনা, অতএব আমাকে কিছু বলে কাজ হবেনা।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা মো. আবু সাঈদ বলেন, কাজের অনিয়মের বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। তবে কৃষকের আবাদী জমির মাটি ক্রয়ের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে চায়না কোম্পানির কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা সাসেক-২ এর ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার (ডিপিএম) জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিম্নমানের কাজের কথা অস্বীকার করে বলেন, নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া গাইবান্ধায় কোন বালু মহাল না থাকায় বালু মহাল থেকে বালু নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই বিভিন্ন সোর্স থেকে বালু সংগ্রহ করা হচ্ছে।

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক আবদুল মতিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, নিম্নমানের কাজের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোন যোগসূত্র নেই বরং প্রশাসন সঠিক ভাবেই তাদের দায়িত্ব পালন করছে। বালু মহাল থেকে বালু না নেওয়ার কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে- এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক রাজস্ব হারানোর কথা স্বীকার করে বলেন, খোঁজ-খবর নিয়ে এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন :