লালমনিরহাটে নৃশংস হামলা; পিটিয়ে হত্যার পর পুড়িয়ে ফেলা ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৩:১৯ PM, ৩০ অক্টোবর ২০২০

Spread the love

ডিবিসি প্রতিবেদক;

লালমনিরহাট পাটগ্রামের বুড়িমারীতে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তাকে পিটিয়ে হত্যা এবং তার লাশ আগুনে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা হতবাক করেছে সাধারণ মানুষকে।
হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে এ ধরণের নৃশংসতাকে মধ্যযুগের বর্বরতার সাথে তুলনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

নিহতের ভাই তৌহিদুন্নবী জানান, ওইদিন সকালে তার ভাই মোটরসাইকেলযোগে এক স্কুলের বন্ধুর বাড়িতে যায়। সেখান থেকে সবাই বেরিয়ে গেলেও তার ভাই শহিদুন্নবী জুয়েল কখন কি উদ্দেশ্যে বুড়িমারী গিয়েছিলেন, তা কেউ জানেনা। সন্ধ্যার পর তিনি বাড়িতে না ফেরায় এবং মুঠোফোনে তার কোনো সাড়া না পাওয়ায় খোঁজাখুৃঁজি করা হয়।এক সময় ওই বন্ধুর কাছে খোঁজা নেওয়া হলে তিনি পাটগ্রামের বুড়িমারীর সেই সহিংস পরিস্থিতির কথা জানান।

একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া গণপিটুনির ভিডিওটি দেখে তৌহিদুন্নবী নিশ্চিত হন যে, হামলার শিকার ওই ব্যক্তি আর কেউ নন, তারই আপন ভাই শহিদুন্নবী জুয়েল।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ এবং তার বয়স প্রায় ৫০ বছর বলে জানা যায়।

নিহত শহীদুন্নবী জুয়েল রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের জামালপুর সখিপুরপাড়ার বাসিন্দা মরহুম ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে।

এদিকে স্বামীর এমন আকস্মিক মৃত্যুতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন নিহত শহীদুন্নবী জুয়েলের স্ত্রী এবং তার দুই সন্তান।

শহীদুন্নবী জুয়েল রংপুর জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে ভর্তি হন। সেখানেই অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।

পড়াশোনা শেষে, তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের লাইব্রেরি সায়েন্সের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

মূলত সেখানকার লাইব্রেরির ইনচার্জ হিসেবে কাজ করতেন তিনি। টানা ২৪ বছর সেই চাকরি করেছেন শহীদুন্নবী জুয়েলে।

গত বছর অবসরে যাওয়ার পর শহীদুন্নবী জুয়েলে নিজস্ব ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন। না হলে নতুন কোনো চাকরিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই তৌহিদুন্নবী। তবে তার মানসিক হতাশা গুরুতর কিছু ছিল না বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।তার এমন নৃশংস মৃত্যুর ঘটনা কেউই যেন স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না।

ব্যক্তি জীবনে সহজ, সরল, অমায়িক ও ধর্মভীরু মানুষ হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ছিলেন শহীদুন্নবী জুয়েল।
ধর্মগ্রন্থের পাশাপাশি তিনি নানা ধরণের বই পড়তেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই তৌহিদ্ন্নুবী। তার ইংরেজি ভাষায় ভালো দখল ছিল বলেও তিনি জানান।

পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত গণপিটুনিতে বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যেগুলোর কোনোটা ছেলেধরা বা ডাকাত সন্দেহে, অথবা কোনো কোনো ঘটনায় সামান্য চোর সন্দেহ হলে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।

তবে পিটিয়ে মারার পর মৃতদেহের গায়ে প্রকাশ্যে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, এমন নৃশংসতার ঘটনা এটাই প্রথম। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এবং সামাজিক সচেতনতা ছড়িয়ে দিলে গুজবকে ঘিরে এ ধরণের নৃশংসতা দমন করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আপনার মতামত লিখুন :