ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরীর কারখানার পয়জনিংয়ে মারা গেছে অর্ধশত গরু

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৫:০৪ PM, ১৭ এপ্রিল ২০২১

Spread the love

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি; 

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরীর কারখানার পয়জনিংয়ে কৃষকের অর্ধশত গরু মারা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের বর্ষাও গ্রামের হাফিজার রহমানের ছেলে মো. পলাশ প্রায় তিনবছর আগে রাজাবিরাট শহরগছি চারমাথা সংলগ্ন রাস্তার পাশে ডাঙ্গামারা পুকুরপাড়ে অবৈধভাবে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরীর কারখানা গড়ে তোলে। কারখানার কারণে ব্যাটারির অ্যাসিডের প্রকট গন্ধে স্থানীয় সহ রাস্তায় চলাচলরত লোকজন অতিষ্ট। তাছাড়া কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, এই কারখানা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এলাকাবাসি বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও মেলেনি প্রতিকার।

সরেজমিনে জানা যায়, গত ১৪ এপ্রিল বর্ষাও গ্রামের সোহেল রানা সরকারের কয়েকটি গরুর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি গাভী হঠাৎ করে অসুস্থ্য হয়ে মারা যায়। তার আরও দুটি গরু অসুস্থ্য হয়েছে বলেও জানান তিনি। একইদিন পাশের বাড়ির আবু সাঈদ নামের এক ব্যক্তির প্রায় ২ লাখ টাকা মূল্যের দুটি গরু মারা যায়। এসময় রানু চৌধুরীর প্রায় সোয়া দুই লাখ টাকা মূল্যের দুটি গরু মারা যায়।

সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী রাজস্ গ্রামের জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির প্রায় আড়াই লাখ টাকা মূল্যের দুটি গরু মারা যায়। অপর দিকে রাজস্ হিন্দুপাড়া গ্রামের এক নারীর ৫টি গরু মারা গেছে বলে জানা যায়। এভাবেই কয়েকটি গ্রামে অনেকের প্রায় অর্ধশত গরু মারা গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীরা অভিযোগ করে বলেন, কারখানার মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। রাত করে কারখানা চালায় তারা। প্রকট গন্ধে রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারেনা। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও তারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানায়। কিন্তু কোন প্রতিকার মিলছেনা। এভাবেই প্রায় অর্ধশত গরু মারা গেলেও কারো টনক নড়ছে না। আমরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ক্ষতিপূরণ দাবী করছি।

ভুক্তভোগি সোহেল রানা বলেন, আমার স্ত্রী গরু মারা যাওয়ার শোকে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, পাশের বাড়ির রানু চৌধুরী তার বাবার পেনশনের টাকায় কেনা গরু দুটি মারা যাওয়া সে নিঃস্ব হয়েছে। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি দরিদ্র মানুষ। দিনমজুরের কাজ করি। গরুই ছিল আমার একমাত্র সম্বল। দুটি গরু মারা যাওয়ায় আমার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে অনেকের কাছে গিয়েছি। কিন্তু কোন সাড়া মেলেনি। আমি এর ক্ষতিপূরণ চাই।

জানতে চাইলে কারখানার মালিক মো. পলাশ বলেন, কারখানার কারণে নাকি মানুষের গরু মারা যাচ্ছে। সেজন্য কারখানা বন্ধ রেখেছি। কারখানা বন্ধ থাকার পরও যদি কারো গরু মারা যায় তাহলে আমার কি করার আছে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মজিদুল ইসলাম বলেন, ব্যাটারি পুড়িয়ে যে সিসা তৈরী হয়ে থাকে, এতে পয়জনিং তৈরী হয়। এতে শুধু গরুই নয়। ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরে পয়জনিং (রক্তকণিকা ও মস্তিস্কের কোষ ক্ষতি করা) সৃষ্টি করে। এর ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিস্কের ক্ষতিসাধন হতে পারে।

এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন :