পৌরসভা নির্বাচন; নৌকার বিপর্যয়, বিপ্লবের বিজয় প্রত্যাশিত!!
শাহারুল ইসলাম, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌর নির্বাচন শেষ হলেও নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে আলোচনা থেমে নেই। রাস্তা-ঘাঠে, চায়ের দোকানে, হোটের-রেস্তোরায়, নেতা-কর্মীদের মধ্যে সর্বত্রই এখন ভোটের ফলাফল নিয়ে চলছে আলোচনা-বিচার-বিশ্লেষণ। প্রার্থীদের দোষ ও গুণের হিসাব-নিকাশ পলাশবাড়ী পৌরবাসীর মুখে মুখে। বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম সারোয়ার প্রধান বিপ্লবের বিপুল ভোটে জয়লাভের বিষয়কে প্রত্যাশীত বলে মনে করছেন পৌরবাসী। তবে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর ফলাফলকে ‘বিপর্যয়’ হিসেবেই দেখছেন পৌরবাসী। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা দলীয় প্রার্থীর ফলাফলে একেবারেই স্থম্ভিত হয়েছেন। তারা নৌকার ভরাডুবির কারণ মেলাতে পারছেন না। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, দলীয় নেতা-কর্মী, তৃণমূলের নেতা-কর্মী, সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষের আলোচনায় ভুলপ্রার্থী বাচাই, ইমেজ সংকট, প্রার্থীর আচারণগত সমস্যা, দলীয় কোন্দ্বল, দলের নেতা-কর্মীদের অসহযোগীতা এবং পৌর প্রশাসক থাকাকালে এলাকার উন্নয়ন ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় গুলো উঠে এসেছে। ভোটের ফলাফল দেখা যায়, মোট ১৬টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৩ টিতে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার প্রধান বিপ্লব বেশি ভোট পেয়েছেন। এসব কেন্দ্রে ভোটের ব্যবধানও ছিল নজরে পড়ার মতো। মেয়র প্রার্থী ভোট পেয়েছেন নারিকেল গাছ প্রতীক ১০২৬২টি, নৌকা প্রতীক ৫৮৬৭টি, ধানের শীষ প্রতীক ২৯৩৬টি, লাঙ্গল প্রতীক ৬১৮টি, জগ প্রতীক ৩২৭১টি এবং কম্পিউটার প্রতীক ৩১৮টি। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকেই পৌরবাসীর সর্বস্তরের জনসাধারণ, ভোটার, সমর্থক ও ভোটারকর্মীরা গোলাম সারোয়ার প্রধান বিপ্লবের জন্য প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। গোলাম সারোয়ার প্রধান বিপ্লবের ব্যক্তিগত ইমেজ তুঙ্গে ছিল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী আবু বকর প্রধানের ভরাডুবির পেছনে তার ব্যক্তিগত ইমেজ সংকটই সবচেয়ে বেশী দায়ী। ১৬টি ভোট কেদ্রের মধ্যে আবু বকর প্রধান মাত্র ৩টি ভোট কেদ্রে বিজয়ী প্রার্থী গোলাম সারোয়ার প্রধান বিপ্লবের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তবে ভোটের ব্যবধান চোখে দেখার মতো নহে।
ভোট কেন্দ্রে আসা ভোটাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন নির্বাচন সুষ্ঠ হয়েছে। তারা এই ধরনের একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠ ও সুন্দর নির্বাচন প্রত্যাশা করেছিলেন। এই নির্বাচন ভোটারদের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক, শিক্ষক, গবেষক, সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষ পলাশবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচনের ফলাফল স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ারের জন্য প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমন্বয়ের ফসল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্য এটা বড় ‘বিপর্যয়’ বলে ধরে নিতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার প্রধান বিপ্লবের ব্যক্তি ইমেজ থাকায় ভোটাদের একত্রে করতে পেরেছেন বলেই তিনি প্রত্যাশিত ফলাফল পেয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবু বকর প্রধান তার ব্যক্তি ইমেজের অবনতি হয়েছে। ইমেজ সংকটের কারনে দলীয়সমর্থক ও ভোটাররা তার ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ কারনে নির্বাচনী ফলাফলে তার বিপর্যয় ঘটেছে। দীর্ঘ দিনের রাজনীতি জীবনে আবু বকর প্রধান দলীয় ও ব্যক্তিগত ইমেজ গড়তে ব্যর্থ হয়েছেন। পলাশবাড়ীতে নৌকার পরাজয় হয়নি, হয়েছে ব্যক্তির পরাজয়। অপর দিকে বিএনপি’র সাংগঠনিক ভাবে পলাশবাড়ীতে শক্তিশালী অবস্থানে নেই। ধানের শীষের ওপর পলাশবাড়ী মানুষের আগ্রহ বরাবরই কম ছিল বলে বিএনপি’র মনোনিত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ কম ভোট পেয়েছেন। এটাকে সাধারণ জনগণের সুচিন্তিত রায় বললে ভুল হবেনা। কারণ প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজই অনেক কিছু করতে পারে।
গত ১৮ ও ২১ ডিসেম্বরে পৃথক পৃথক পৌর নির্বাচন-২০২০ পরবর্তী এক মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তৃর্ণমূল নেতাকর্মীর কোন খোঁজ-খবর রাখেন না তারা। এ কারনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভালো ছিলনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মীরা বলেছেন, যোগ্য নেতৃত্ব না থাকার কারণে পলাশবাড়ীতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগকে এই বিপর্যয় ও ফলাফল মেনে নিতে হবে। এখান থেকে আওয়ামী লীগকে শিক্ষা নিতে হবে। পলাশবাড়ী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি কতটা দুর্বল এই নির্বাচনের ফলাফল তা প্রমাণ করে। নেতারা সবাই নিজেকে বড় করে দেখছেন। বাস্তবে এসব নেতারা জনবিচ্ছিন্ন। এ ফলাফলই প্রমাণ করেছে তারা জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২নং হোসেনপুর ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ড সভাপতি সাইদুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, গত ২১শে মার্চ জাতীয় সংসদ উপ-নির্বাচনের পরেদিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্য অতর্কিতভাবে হামলা করে। স্থানীয়রা এগিয়ে না আসলে বা উদ্ধার না করলে ঘটনা স্থলে আমার মৃত্যু হতো। এ বিষয়ে সভাপতিকে জানালে তিনি কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং গোপনে গোপনে আমার প্রতিপক্ষের পক্ষ নিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, আগামীতে যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এখন আরও শক্তিশালী হবে। বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও গোলাম সারোয়ার প্রধান বিপ্লব মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান।

