পলাশবাড়ীতে বিদ্যালয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ একই পরিবারের ৪ শিক্ষকের আধিপত্য

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১২:৩৫ PM, ০৭ জুন ২০২২

Spread the love

পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই পরিবারের ৪ জন শিক্ষকের আধিপত্য। দীর্ঘদিন থেকে তারা ওই বিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করছেন। ফলে পারিবারিক কলহ প্রায়ই বিদ্যালয় পর্যন্ত চলে আসার কারণে পড়ালেখার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানয়ী কয়েকজন ব্যক্তি জানান, একই পরিবারের ৪ জন শিক্ষক একই বিদ্যালয়ে থাকায় পড়ালেখার বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে, কেউ কারো কথা শুনতে চায় না। তাদের অন্যত্র বদলী না করা হলে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা আরো ভেঙে পড়বে। জানা যায়, পশ্চিম ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৯৭ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান ওই গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে আব্দুল হালিম। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন আব্দুল হালিমের আপন দুই ভাইয়ের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন ও নাসরিন বেগম। বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে সরকারীকরণ হলে আব্দুল হালিমের স্ত্রী রাবেয়া বেগম অন্য একটি বিদ্যালয় থেকে বদলী নিয়ে ২০১৬ সালে পশ্চিম ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

এলাকাবাসীর মতে স্বামী-স্ত্রী সহ একই পরিবারের ৪ জন শিক্ষক এই বিদ্যালয়ে চাকুরী করায় প্রায়ই পারিবারিক কলহ বিদ্যালয় পর্যন্ত গড়ায় যার কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষা ব্যবস্থা ভেস্তে যেতে বসেছে। শিক্ষকদের এমন আচরণে অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে দিতে চায় না। ৬ জুন সোমবার ১২ টা ৩০ মিনিটে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৩য়-৫ম শ্রেণির ক্লাস চলছে। হাজিরা খাতায় এই তিন শ্রেণির মোট ৩৬ জন শিক্ষার্থী দেখা গেলেও বাস্তবে ২০ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পাওয়া যায় এবং ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাটিতে বসে ক্লাস করতে দেখা যায়। জানতে চাইলে সহকারি শিক্ষক রাবেয়া বেগম বলেন, ব্রেঞ্চ না থাকলে তো মাটিতে বসেই ক্লাস করবে। তাকে বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে ৩ জন শিক্ষকের উপস্থিতি ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক আকবর আলী হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই পলাশবাড়ী চলে গেছেন।

প্রধান শিক্ষকের সাথে মোবাইলে এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি উপজেলায় আছি, আপনার কি জানার দরকার উপজেলায় আসেন। সহকারি শিক্ষক আকবর আলীর বিদ্যালয়ে না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনিও উপাজেলায় রয়েছেন। এলাকার অনেকেই জানান, সহকারি শিক্ষক আকবর আলী প্রায়ই বিদ্যালয়ে এসেই আবার চলে যান।

এদিকে কিছুদিন আগেও পারিবারিক কলহ বিদ্যালয় পর্যন্ত গড়িয়ে মারামারি মতো ঘটনাও ঘটেছে।

জানা গেছে, ২২ মে ক্লাস নেয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম ও তার স্ত্রী সহকারি শিক্ষক রাবেয়া বেগমের সাথে সহকারি শিক্ষক শাহনাজ পারভীনের কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে ২৩ মে তাদের মধ্যে মারামারি হয় এবং শাহনাজ পারভীন আহত হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে সহকারি শিক্ষক শাহনাজ পারভীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম জানান, সহকারি শিক্ষক শাহনাজ পারভীন সময়মত বিদ্যালয়ে আসেন না। মূলত তা নিয়েই কথা কাটাকাটি হয়েছে।

ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি প্রভাত চন্দ্র বলেন, পারিবারিক কলহ প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার বিঘ্ন ঘটছে। ক্লাস্টারে দায়িত্বরত সহকারি শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান দোলন বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে মারামারির বিষয়টি আমিও শুনেছি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাজমা খাতুন বলেন, মারামারির বিষয়ে আমি অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষকরাই যদি মারামারি করে তাহলে শিক্ষার্থীদের কি শিখাবে। আমরা এ ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন বলেন, গত কয়েকদিন আগে আমি ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মারামারির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষকদের এমন আচরণ খুবই দুঃখজনক।

আপনার মতামত লিখুন :