পলাশবাড়ীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দিতে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ
শাহারুল ইসলাম, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ভূমিহীন ও গৃহহীন বৃদ্ধা রেনুবালা মহন্তকে (৭৫) আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও জমি দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠছে সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে।
৬ হাজার টাকা নিয়ে অবশেষে ফেরত দিল উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল।
সোমবার (৮ আগষ্ট) সন্ধ্যায় নিজ অফিসে ভুক্তভোগীদের চাপের মুখে স্থানীয় সর্বসাধারণ ও গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে উক্ত টাকা ফেরত দেন তিনি।
ভুক্তভোগী ও উপস্থিত জনসাধারণ সূত্রে জানা যায়, পলাশবাড়ী পৌর এলাকার গৃধারীপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত সুনীল চন্দ্র মহন্ত এর বিধবা স্ত্রী দীর্ঘদিন হলো কন্যা, ছেলে ও নাতি-নাতনীসহ মেথর পট্টি এলাকায় অন্যের জমিতে ভাঙ্গা চুড়া ঘরে বসবাস করে আসছেন। বর্তমান সময়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় রেনু বালা মহন্ত ঘর ও জমি পাওয়ার আশায় ভূমি অফিসের সুইপার শ্যামলের মাধ্যমে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিলকে ৬ হাজার টাকা ঘুষ দেন। টাকা দেওয়ার পর কয়েক মাস পেরিয়ে গেলোও বৃদ্ধা রেনুবালা ঘর ও জমি না পেয়ে দিনের পর দিন ঘুরতে থাকেন। এরপর টাকা ফেরত চাইলে ইব্রাহিম খলিল নানা ভাবে আজ নয় কাল করে তালবাহানা এবং হুমকি-ধামকি ও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায়। এতে উপায় অন্তর না পেয়ে অবশেষে ভুক্তভোগী বৃদ্ধা নারী তার ২ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিলের অফিসে এসে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য ইব্রাহিম খলিলের সাথে বাকবিতন্ডে জড়িয়ে পড়েন।
এরপর স্থানীয়রা উপস্থিত হলে তারা বিষয়টি সাংবাদিকদের জানালে সাংবাদিকগণ ভূমি অফিসে উপস্থিত হয়ে বিষয়টির ভুক্তভোগীদের কাছে জানতে চাইলে, তরিঘড়ি করে সাংবাদিকদের সামনে বৃদ্ধা রেনু বালা মহন্তের হাতে বাকি ৪ হাজার টাকা ফেরত দেন সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল।
এসময় রেনু বালা মহন্তের ২ ছেলে নিরু চন্দ্র মহন্ত (৪০) ও বিরু চন্দ্র মহন্ত (৪২) উপস্থিত ছিলেন৷
অফিসের সুইপার শ্যামল চন্দ্র সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিলের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ইব্রাহিম খলিল স্যারের নির্দেশে উক্ত বৃদ্ধার নিকট হতে টাকা নিয়ে এসে তাকে দিয়েছি। টাকা নিয়ে ফেরত দেওয়ার ও বৃদ্ধা রেনু বালা মহন্তের নিকট হতে টাকা গ্রহনের বিষয়ে ক্যামেরার সামনে অস্বীকার করেন সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন বলেন, ভুক্তভোগীদের নিকট হতে টাকা গ্রহনের বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এদিকে রেনু বালা মহন্ত ও তার ২ ছেলে নিরু ও বিরু চন্দ্র মহন্ত বলেন, দীর্ঘদিন হলো ঘর ও সরকারি জমি পাওয়ার আশায় ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিলকে টাকা দিয়েও ঘর ও জমি না পাওয়ায় প্রদানকৃত টাকা ফেরত দিতে নানা তালবাহানা, হুমকি-ধামকিসহ নানা ভয়ভীতি দেখাতো।
এর আগে ২ হাজার টাকা ফেরত দেয় আজ সন্ধ্যায় এসে বাকি ৪ হাজার টাকা ফেরত চাইলে ইব্রাহিম খলিল আমাদের গালাগালিজ করে এতে আমরাও তার কথার প্রতিবাদ করলে এতে তার সাথে বাকবিতন্ডা শুরু হলে উপস্থিত অন্যান্যদের খবরে আপনারা সাংবাদিকরা আসলেন এরপর সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল অবস্থা বেগতিক দেখে আপনাদের সামনে আমাদের হাতে বাকি ৪ হাজার টাকা ফেরত দিল৷
উল্লেখ্য, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে পলাশবাড়ী উপজেলায় ১৪০ জন সুবিধাভোগী পরিবারকে ঘর ও ২ শতাংশ করে জমি প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব ঘর নির্মাণাধীন থাকায় ও বর্তমান সময়ে সুবিধাভোগীদের নাম প্রকাশ হওয়ায় সুবিধা বঞ্চিতরা তাদের প্রদানকৃত টাকা না পেয়ে বর্তমানে মুখ খুলছেন। এসব ঘর ও জমি প্রদানে একাধিক বঞ্চিত ভুক্তভোগীদের নিকট হতে সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল সহ অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের টাকা না দিলে ভূমি সংক্রান্ত কোন কাজ হয় না। এসব কাজে তাদের চাহিদা মতো টাকা না দিলে দিনের পর দিন ঘুড়তে হয় নানা অজুহাত দেখায় এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী একাধিক সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যমকর্মী।
ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল সহ অন্যান্যদের অনিয়ম ও দূর্নীতি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান ভুক্তভোগী মানুষ ও উপজেলার সচেতন মহল।

