নৌকা ডুবালেন বিদ্রোহী প্রার্থী, ঘরের শত্রু বিভীষণ
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;
সাংসদ নৌকার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নৌকার, গততে একটানা দুইবার মেয়রও ছিলেন নৌকার। তাহলে অর্ধেকেরও বেশি ভোটে নৌকার পরাজয় কেন? এমন প্রশ্ন খোদ দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে। তবে দলীয় নেতাদের অসহযোগিতাকে দায়ী করলেন নৌকার প্রার্থী কেএম জাহাঙ্গীর আলম। মেয়র পদে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুকিতুর রহমান রাফি বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১১ হাজার ১শ’ ৪৯ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী ফারুক আহম্মেদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৪শ’ ৯৪ ভোট। আওয়ামীলীগ প্রার্থী কেএম জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৯ ভোট। আওয়মীলীগ রয়েছেন তৃতীয় অবস্থানে।
শনিবার সন্ধ্যায় ভোট গণনা শেষে উপজেলা পরিষদ হলরুমে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসার মো. আব্দুল মোত্তালিব। জেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুল মোত্তালিব বলেন, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ১৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মুকিতুর রহমান রাফি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আমাকে দলীয় প্রতীক দেননি। এরপরও আমি প্রার্থী হয়েছি। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শাস্তিপূর্ণভাবে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণ জনগণ আমাকে বিপুলভোটে নির্বাচিত করেছেন। আমি পৌরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে জবাবদিহিতার সাথে একটি মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
জাহাঙ্গীর বলেন, যিনি নৌকা মার্কার বিরুদ্ধে ভোটে লড়েছেন, তিনি বর্তমান উপজেলা আওয়ামীগের সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের শ্যালক। স্বাভাবিকভাবেই তিনি প্রকাশ্যে তার শ্যালকের পক্ষে কাজ করেছেন। তাছাড়া শেষ মুহুর্তে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পাশে ছিলেন না। তিনি আরও বলেন, আমি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়ীত্ব পালন করেছি, চলতি দায়িত্বে জেলা পরিষদ সদস্য ও কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। জনপ্রিয়তা না থাকলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা মার্কা উপহার দিতেন না।
উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান বলেন, ঘরের শত্রু বিভীষণ। নৌকার ঘাটিতে যদি নৌকার পরাজয় হয়। তাহলে বুঝতে হবে খোদ দলীয় নেতা-কর্মীরাই বেঈমানী করেছে। তিনি আরও বলেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যিনি নৌকার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। সেবারে হেরে গিয়ে আবারও তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়েছেন। তারা কিভাবে আওয়ামীলীগ দাবী করে। বর্তমান উপজেলা আওয়ামীগের সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদও সরাসরি নৌকার বিপক্ষে গিয়ে তার শ্যালকের পক্ষে কাজ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আতাউর রহমানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রধান আতাউর রহমান বাবলু বলেন, আমরা এ ব্যাপারে বার বার দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি যে, যারা দলীয় পদ পদবী ব্যবহার করে এবং দলীয় সিদ্ধান্তকে মানে না। তারা কিভাবে দলের পদে থাকে। এতে করে দলে বিভক্তি সহ নেতা-কর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে একটি দল চলতে পারেনা।
তৃতীয় ধাপে শনিবার ৩০ জানুয়ারী সকাল ৮টায় শুরু হয়ে একটানা ৪টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ। অবাধ, সুষ্ঠু ও শাস্তিপূর্ণভাবে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৫জন প্রার্থী। এছাড়া কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন ও সংরক্ষিত নারী আসনে ১২জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। মোট কেন্দ্র ১৫টি, মোট ভোটার পুরুষ ১৪ হাজার ৬শ’ ৭৪, নারী ভোটার রয়েছেন ১৫ হাজার ৩শ’ ৫জন।

