ধর্ম অবমাননার অভিযোগ; লালমনিরহাটে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর মৃত দেহে আগুন
ডিবিসি প্রতিবেদক;
লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর মৃত দেহে আগুন দিয়েছে বিক্ষুদ্ধ জনতা।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে নিহতের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলাম বলেন, আছরের নামাজ শেষে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ২জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি আসে। মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের একজন মসজিদের ভেতরে গিয়ে কোরআন হাদিসের বই রাখার তাকে অস্ত্র আছে বলে তল্লাশী শুরু করে। একপর্যায়ে মসজিদের সামনে থাকা ৫-৬ জন মুসলি মসজিদের প্রবেশ করে ওই ব্যক্তিকে এবং বারান্দায় থাকা অপর ব্যক্তিকে মারধর করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ২ ব্যক্তিকে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষের ভেতরে ঢুকে তালা লাগিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করি। ওই মুহূর্তে শত শত লো সেখানে জমায়েত হতে থাকে। আমি ও স্থানীয় রফিকুল ইসলাম প্রধান নামের এক ব্যক্তি পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত, ইউএনও কামরুন নাহার, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল ও বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নেওয়াজ নিশাতকে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলি।
তৎক্ষনাত উত্তেজিত জনতা কারো কথা না শুনে পরিষদের দরজা-জানালা ভেঙে এক ব্যক্তিকে বাহিরে বের করে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর লাশ নিয়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের বুড়িমারী প্রথম বাঁশকল এলাকায় কাঠখড়ি ও পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। ঘটনাস্থলে ৫ থেকে ৬ হাজার উত্তেজিত জনতা ছিল, সেখানে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
মোবাইলে তিনি আরও বলেন, আমরা ওই ২জনের সঙ্গে কথা বলারও সময় পাইনি এবং তাদের পরিচয় নেওয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি তারা কোন ধর্মের লোক তাও জানা যায়নি।
ওই মসজিদের মুয়াজ্জিন আফিজ উদ্দিন বলেন, আমি আছরের নামাজ শেষ করে বাহিরে বের হয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পাই খাদেম জুবেদ আলীকে ২জন অপরিচিত ব্যক্তি সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক করে কথা বলছিল। এরপর তারা মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর আমি চলে যাই।
মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে র্যাব ও আর্মির পরিচয় দিয়ে বলা হয় যে, কোরআন শরীফ ও হাদিস রাখার তাকে নাকি অস্ত্র আছে। একথা বলে তাদের একজন খোঁজ শুরু করে। একপর্যায়ে সবকিছু তছনছ করে। এসময় মসজিদের বাহিরে অবস্থানরত হোসেন আলী (৩৫) নামে এক মুসল্লিসহ ৫ থেকে ৬ জন মুসল্লি মসজিদে প্রবেশ করে ২জনকে ধরে বাহিরে নিয়ে আসে। মসজিদের বারান্দার সিঁড়িতে প্রথম দফায় তাদের মারধর করা হয়। পরে হাফিজুল ইসলাম মেম্বার এসে তাদেরকে নিয়ে যায়। এরপর কি হয়েছে আমি তা জানি না।

