ডিজিটাল প্রতারকচক্রের ফাঁদে বয়স্ক-বিধবা-প্রতিবন্ধী ভাতাভোগিরা; তদন্তের নিদের্শ আদালতের

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৬:৪১ PM, ২০ জুলাই ২০২১

Spread the love

গাইবান্ধা প্রতিনিধি;

গাইবান্ধায় মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে অভিনব কায়দায় অসহায় প্রতিবন্ধী-বয়স্ক ও বিধবাদের ভাতার অর্থ আত্মসাতের সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের পর বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গাইবান্ধা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট উপেন্দ্র চন্দ্র দাসের আদালত এ আদেশ দেন বলে মঙ্গলবার বিকেলে নিশ্চিত করা হয়।

প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবাদের ভাতার অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশিত হলে আদালতের গোচরিভূত হয়। এমন ঘটনা খুবই দু:খজনক, অমানবিক ও ঘৃণ্য অপরাধ ও সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠণ বিরোধী কাজ উল্লেখ করে বিষয়টি তদন্ত করে কেন, কারা, কিভাবে এ অপরাধ সংঘটন করেছে তা খতিয়ে দেখে আগামী ২৩ আগষ্টের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত।

ভাতার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র, অসহায় হাজার হাজার প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর মোবাইল ফোন নম্বর পরিবর্তন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। এমন ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধায়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ভাতাভোগিদের সঙ্গে প্রতারণা করছে নিবন্ধন কাজে নিয়োজিত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এজেন্ট ও সমাজসেবা অধিদপ্তর। দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে আশ্বাস উপজেলা প্রশাসনের।

সদর উপজেলার খোলাহাটির ইউনিয়নের বাক-প্রতিবন্ধী মাজেদার ভাতার টাকা চলে গেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদের মোবাইলে। প্রতিবন্ধী মাসুদসহ আরও অনেকের টাকাও যাচ্ছে অন্য কোনো মোবাইল নম্বরে। সমাজসেবা অফিস থেকে বিতাড়িত হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করছেন তারা। টাকার জন্য ইউএনও অফিসেও ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছেনা এসব অসহায় মানুষের।

ভুক্তভোগীরা জানান, যে মোবাইল ফোনে টাকা গেছে সেটি এখন বন্ধ। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এজেন্ট ও সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে, যে মোবাইল ফোনে টাকা পাঠানো হয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।

আরেকজন জানান, মিয়াপাড়ার ইউপি সদস্য কালাম- এর ফোন নম্বরে একজনের টাকা চলে গেছে। টাকার জন্য তার কাছে ফোন করলে তিনি হুমকি দেন ভাতাভোগিকে।

তাদের কথার সূত্র ধরে খোলাহাটির মিয়াপাড়ায় গিয়ে জানা গেল ভয়ংকর তথ্য। জানা গেছে একইভাবে প্রত্যেকের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ডিজিটাল কায়দায় চুরি হচ্ছে গরিব-দুঃখীর প্রাপ্য অর্থ।
ভুক্তভোগীরা জানান, টাকা দেওয়ার কথা বলা হলেও টাকা পাইনি। উপজেলায় গিয়ে অভিযোগ জানানোর পরও কর্মকর্তা জানান বিষয়টি দেখছি।

এক বৃদ্ধ বলেন, যারা এ কাজে জড়িত তাদের আমরা শাস্তি চাই। জড়িতদের শাস্তি চাইলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আর তদন্তের আশ্বাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার।

গাইবান্ধা সদরের খোলাহাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ সামাদ আজাদ বলেন, আমি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম বলেন, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কাজগুলো করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলায় ২ লাখ ৪০ হাজার ভাতাভোগীর মধ্যে লক্ষাধিক মোবাইল নম্বর নিবন্ধন করে নগদ আর বাকিটা নিবন্ধন করে সমাজেসেবা অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে পাশ কাটিয়ে যান নগদের কর্মকর্তারা। আর ত্রুটি চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে দাবি সমাজসেবা কর্মকর্তার।

গাইবান্ধা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. কামরুল হাসান সরকার বলেন, ইচ্ছাকৃত ভুল না অন্যকিছু তা তদন্ত করা হচ্ছে।

গাইবান্ধা নগদ লিমিটেডের আঞ্চলিক কর্মকর্তা আসিফ অয়ন বলেন, ফোনে এসব কথা বলতে পারব না। এটার জন্য আমাদের লাইন ম্যানেজার আছে।

সদরের খোলাহাটি ইউনিয়নেই ৫ শতাধিক অসহায় মানুষ ভাতার টাকা পায়নি। জেলার সাত উপজেলায় হাজার হাজার ভাতাভোগীর মোবাইল নম্বর বদলে টাকা তুলে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র।

আদালতের আদেশে বলা হয়, প্রকাশিত সংবাদের ঘটনা সত্য হলে তাতে প্রতারণা, জ্বালিয়াতি, চুরি ও অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটনের উপাদান রয়েছে।

আদালত বলেন, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় দেশের প্রতিবন্ধীসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতা চালু করেছে। উপকারভোগীদের সুবিধার্থে ভাতা প্রাপ্তি সহজীকরণের লক্ষে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। সেখানে একটা ইউনিয়নেই পাঁচ শতাধিক উপকারভোগীর ভাতা বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা খুবই এলার্মিং। ভাতার টাকা আত্মসাৎ/চুরির মাধ্যমে অপরাধীরা প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ভাতা প্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে যা খুবই অমানবিক ও ঘৃণ্য অপরাধ।

আদালত আদেশে আরও বলেন, অপরাধীদের উক্তরুপ কার্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠণ বিরোধী কাজ। শুরুতেই রোধ করা না গেলে দিনে দিনে এরুপ অপরাধ বৃদ্ধি পাবে, যাতে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হবার আশঙ্কা রয়েছে। সংগত কারণেই অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা সমীচীন।

আদালত দি কোড অব ক্রিমিনাল প্রোসিডিউর ১৯৯৮ এর ধারা ১৯০ (১) (সি) অনুযায়ী আমলে গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাইবান্ধাকে প্রচারিত সংবাদের সত্যতা ও তাতে বর্ণিত বিস্তারিত তদন্ত পূর্বক ২৩ আগষ্টের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

আদেশে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর তালিকাভূক্তদের দাবীমতে প্রকৃত পক্ষেই জ্বাল-জ্বালিয়াতির মাধ্যমে মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে বা অন্য কোন উপায়ে অন্য কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা উত্তোলন করে নিয়েছে কিনা, উত্তোলন করে থাকলে কতজনের, কি পরিমাণ ভাতা উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে তার পরিমাণ সুষ্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে তদন্ত করে প্রতিবেদনে উল্লেখের নির্দেশ দেন আদালত। একই সাথে প্রতিবেদনে বর্ণিত ঘটনার সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট অপরাধের সাথে জড়িত অভিযুক্তদের নাম, ঠিকানা এবং অপরাধ সংঘটনে অভিযুক্তদের ভূমিকাসহ ঘটনার তারিখ, সময় ও স্থান বিস্তারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে আদেশে বলা হয়েছে।

 

আপনার মতামত লিখুন :