জেলা প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে খেলার মাঠের মাটি কর্তন, এলাকাবাসীর অভিযোগ দায়ের

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৩:৪০ PM, ২১ জুলাই ২০২২

Spread the love
এম এ ওয়াহেদ, লাখাই (হবিগঞ্জ) থেকে;
হবিগঞ্জ  সদর উপজেলার পইল নতুন বাজার খেলার মাঠে গৃহহীনদের জন্য সম্প্রতি ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে ওই এলাকার জনসাধারণ। তাদের দাবি পইল ইউনিয়নে আরো একাধিক সরকারি জায়গা আছে।
পইল মৌজার জেল নং ৩২, ১ নং খতিয়ানের ৮৩৮৫ দাগে পইল নতুন বাজার খেলার ও গরু চরানোর মাঠে সরকারি ঘর নির্মাণ না করে অন্যত্র স্থানান্তর করা হোক। প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসী গত ২৬ মে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন।
স্মারকলিপির প্রেক্ষিতে গত ২৮ শে জুন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর প্রতীক মন্ডল স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সেখানে লেখা ছিল,উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল নতুন বাজার এলাকার সাধারণ জনগণের পক্ষে তফসিল বর্ণিত খেলার ও গরু চরানোর মাঠে সরকারি ঘর নির্মাণ অন্যত্র স্থানান্তর করার জন্য স্মারকলিপি প্রেরন করেছেন। (কপি সংযুক্ত) এমনতো অবস্থায় উক্ত স্মারকলিপির বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহি অফিসার নাজরাতুন নাঈমকে
সরেজমিনে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
তবে এলাকাবাসীর দাবি বাস্তবে উক্ত নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে ঘর বানানোর উদ্দেশ্যে খেলার মাঠের ভিতরেই মাটিকাটা শুরু করে দিয়েছে মাটিকাটা কমিটির লোকেরা। তাদের দাবি সদর উপজেলা নিবার্হী অফিসোরের নির্দেশেই তারা মাটি কাটছেন । উপায়ন্তর না পেয়ে এলাকাবাসী আবারো ২০ জুলাই জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহি অফিসার নাজরাতুন নাঈম সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনের নির্দেশনার কপি পাওয়ার আগেই ওই এলাকার বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানকে নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে বিষয়টি মিটমাট করে ফেলেছি। যার জন্য নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কোনো ধরনের তদন্ত না করেই মাটি কাটার কাজ শুরু করা হয়েছে। মিটমাট করে থাকলে আবারও কেন এলাকাবাসী অভিযোগ দায়ের করেছেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমিও বিষয়টা বুঝতে পারতেছি না অভিযোগের কপি হাতে আসুক তারপরে দেখা যাবে কি করা যায়।
জেলা প্রশাসক বরাবরে গত ২৬ মে দায়েরকৃত লিখিত স্মারকলিপিতে এলাকাবাসী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ ভূমিহীনদের জায়গাসহ ঘর বরাদ্দ দেওয়া। আমরাও চাই ভূমিহীনদের পূনর্বাসন অব্যাহত থাকুক । কিন্তু পইল গ্রামের যেখানে ৯১ টি পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেখানে সারাবছর সদর উপজেলার বৃহৎ গ্রাম পইলের শিশু – কিশোররা খেলাধুলা করে। প্রতিবছর বৈশাখ মাসে ফসল তোলার মৌসুমে এই মাঠের চারপাশের বাসিন্দারা ধানের খলা তৈরি করে হাজার হাজার মণ ধান উত্তোলন করেন ।
এই মাঠে পইল গ্রামের মানুষ গরু চড়ায়। এছাড়া পৌষ সংক্রান্তিতে প্রায় ২ শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ মাছের মেলা এই মাঠেই অনুষ্ঠিত হয় । ওই মেলায় অংশগ্রহণ করেন জেলা ও জেলার বাহির থেকে আগত কয়েক লক্ষ মানুষ । ধর্ম – বর্ণ নির্বিশেষে এই উৎসব এক মিলন মেলায় পরিণত হয় । এখানে ঘর নির্মাণের ফলে একদিকে যেমন শিশু – কিশোরদের খেলাধুলার জায়গার সংকট হবে, অন্যদিকে বৈশাখে ধানের মৌসুমে খলা তৈরির জায়গারও সংকট হবে ।
সারা বছর গবাদি পশু চরানোর মাঠও থাকবে না, এছাড়া পৌষ সংক্রান্তিতে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলার সময় আরো বেশি জায়গার সঙ্কট তৈরি হবে। অনেকের দাবি ইতিপূর্বে যে সমস্ত জায়গায় সরকারি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে , সেই এলাকাগুলিতে মদ জুয়া মাদকের ছড়াছড়িসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বেড়ে যায় ।
আরো জানা যায়, তাদের নিজেদের মধ্যে লাগাতার ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে । এই ঝগড়া এসিল্যান্ড অফিস , ইউএনও অফিস , এমনকি আদালত পর্যন্ত গড়ায় । পইল এলাকা একটি বৃহৎ গ্রাম হলেও তারা শান্তি প্রিয় মানুষ , আমরা চাই আমাদের এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকুক।যাতে শিশু – কিশোররা সুস্থ বিনোদন খেলাধুলা করে বেড়ে উঠুক ।
বৈশাখে মাসে ধানের মৌসুমে আমরা এই মাঠে খলা তৈরি করে সুন্দর ভাবে ধান উত্তোলন করতে পারি । ২ শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলাও প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় । সারাবছর গরু চরানোর মাঠ হিসাবেও ব্যবহার হোক। এই মাঠ ছাড়াও আরো ৩ থেকে ৪ টি সরকারি নিষ্কণ্টক জায়গা আমাদের এলাকায় আছে । পইল নতুন বাজার খেলার মাঠে ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্তটি পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করলে আমরা এলাকাবাসী আজীবন এর সুবিধা ভোগ করবো ।

আপনার মতামত লিখুন :