ঘোড়াঘাট পৌরসভা; দুই বছরেও শেষ হয়নি ড্রেনের কাজ
লোটাস আহম্মেদ, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি;
হালকা বৃষ্টি। কিংবা ভারী বৃষ্টি। কোন নিস্তার নেই! ঘোড়াঘাট পৌরসভার চিত্র একই। শহরের রাস্তাঘাট। কিংবা গ্রামের অলিগলি। চারিদিকে ময়লা আবর্জনা যুক্ত থইথই পানি।
পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্ট ফান্ডের অর্থায়নে কালিতলা গোলচত্বর থেকে করতোয়া নদী পর্যন্ত আরসিসি ড্রেন নির্মাণের জন্য গত ২০১৮ সালের জুন মাসে ১ কোটি ৯৯ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯২৯ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজ করার অনুমতি পায় রুনা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। একই সালের এপ্রিল মাসে ঘোড়াঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকে কালিতলা পৌরভবন পর্যন্ত আরসিসি ড্রেন নির্মাণে ১ কোটি নিরানব্বই লক্ষ ৭১ হাজার ৮০৮ টাকা বরাদ্দ হয় একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার দুই বছর পার হয়ে গেলেও ড্রেনের কাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র বলছে, কালিতলা থেকে করতোয়া নদী পর্যন্ত চেইনেজ ৭৫০-১+৪৮৫.০০ মিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প ১৮ সালের জানুয়ারী মাস থেকে ১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেধে দিয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্টি বোর্ড। অপর দিকে, বাসস্ট্যান্ড থেকে কালিতলা পর্যন্ত ০.০০-৭৮৭.০০ মিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প ১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সালের আগষ্ট মাস পর্যন্ত বেধে দেওয়া হয়েছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বিতীয় পর্যায়ের বরাদ্দে বাসস্ট্যান্ড থেকে কালিতলা পর্যন্ত ড্রেনটির পুরোপুরি শেষ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে রাস্তা থেকে ড্রেনের উচ্চতা তুলনামূলক বেশি হওয়ায়, রাস্তার পানি ড্রেনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারছে না। অপর দিকে, এই ড্রেনটি কালিতলা থেকে করতোয়া নদী পর্যন্ত নির্মাণকৃত ড্রেনের সাথে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু তা যুক্ত না করে ওই ড্রেন থেকে প্রায় ৩শ গজ আগেই ড্রেনটির কাজ শেষ করে দেয়। ফলে ড্রেনের পানি নিষ্কাশনে বিঘœ ঘটছে। আর হালকা বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বাসস্ট্যান্ড সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম।
অপরদিকে, কালিতলা থেকে পৌর ভবনের সামনে দিয়ে নির্মাণকৃত ড্রেনের এসপির মাঠ সংলগ্ন জায়গায় ড্রেনের কোন কাজই করা হয়নি। মাটি খুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এছাড়াও এই ড্রেনের উপরে ঢাকনা না দিয়েই ফেলে রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ড্রেনটিতে ময়লা আবর্জনা পড়ে পানি নিষ্কাশনের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তার ওপর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ড্রেন নির্মাণ হলেও, নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করায় হালকা বৃষ্টিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পৌর বাসীকে।
জোবায়ের হোসেন নামের এক যুবক বলেন, ড্রেন আছে! কিন্তু ড্রেন গুলোর সংযোগ এবং পানি প্রবাহিত হয়ে কোথায় গিয়ে পড়বে তা ঠিক করতে পারেনি পৌরসভা। ফলে ড্রেনগুলো দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারছে না।
ডেনিস মুরমু নামের এক আদিবাসী শিক্ষক বলেন, এই ড্রেন করার কাজে ব্যাপক দূর্নীতি হয়েছে। যার কারণে ড্রেন নির্মাণের কাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ড্রেন নির্মাণ হওয়ার পর থেকে ব্যর্তমান পর্যন্ত পৌরসভার পক্ষ থেকে কোন পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে ড্রেন পরিষ্কার করতে দেখা যায়নি। এসব কিছু পৌর মেয়রের ব্যর্থতা।
জানতে চাইলে ঘোড়াঘাট পৌরসভার মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন জানান, জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পের কাজে পৌরসভার কোন হাত নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সরাসরি ঠিকাদারের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। হাট বাজার সংলগ্ন ড্রেনগুলোতে লোকজন ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে ড্রেন গুলো ভরে যায়। প্রতিবছর পৌরসভা থেকে ড্রেন গুলো পরিষ্কার করা হয়।
অপর দিকে, পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার পারভেজ বলেন, বাসস্ট্যান্ড থেকে কালিতলা পর্যন্ত ড্রেন নির্মানের কাজ ৭০ ভাগ এবং কালিতলা থেকে করতোয়া নদী পর্যন্ত ড্রেনের কাজ ৫০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে প্রকল্পের কাজ বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকায় পুরো কাজ শেষ করা সম্পন্ন হয়নি। আমাদের টাইম এক্সটেনশনের আবেদন জয়বায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্টি বোর্ড অনুমোদন দিয়েছে। সেইসাথে প্রকল্প সমাপ্তির মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করে দিয়েছে ট্রাষ্টি বোর্ড।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রুনা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাইম এক্সটেনশন জটিলতার কারণে কাজ স্থগিত রাখা হয়েছিল। আমাদের বেশ কিছু কাজ বাকি আছে। আগামী বছরের ভিতর পুরো কাজ সম্পন্ন করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

