ঘোড়াঘাটে স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে ফাঁসাতে নিজের শরীরে এসিড
লোটাস আহম্মেদ, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি;
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে ফাঁসাতে নিজের শরীরে এসিড দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘোড়াঘাট উপজেলার গোসালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে , বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার চেচিবাড়ি গ্রামের বাসুদেব কর্মকারের সাথে ১১ মাস আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার করে আসছিলেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার প্রভাত কর্মকারের মেয়ে প্রতিমা রানী কর্মকার (২৮)। কিন্তু তার স্বামী কারণে অকারণে প্রতিমার রানীর উপর নির্যাতন চালাতো। এছাড়া গভীর রাত পর্যন্ত বাড়িতে লোকজন নিয়ে এসে গাঁজা সেবন করত তার স্বামী। এসব সইতে না পেরে ঘোড়াঘাট উপজেলার গোসালা এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিল সে। কিন্তু ঠিক মত অর্থ উপার্জন না করে সারা দিন ঘুরে বেড়ায় তার স্বামী। এসব নিয়ে ভাড়া বাড়িতেও ঝগড়া-ঝাটি ও নির্যাতন চালায় তার স্বামী। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে গত ৩ থেকে ৪ মাস আগে রাতের আধারে পালিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে প্রতিমা রানী।
এরই প্রেক্ষিতে গত বুধবার (১৮ নভেম্বর) শ্বশুর বাড়ির সামনে এসে নিজের শরীরে নিজেই এসিড মেখে ঝলসে নিয়ে থানায় গিয়ে নিজ স্ত্রী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ও শ্যালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন বাসুদেব।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত বুধবার সকালে উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামে শ্বশুর বাড়ির সামনে চায়ের দোকানে বসে চা ও পান খায় বাসুদেব। এর কিছু সময় পর শ্বশুর বাড়ির পাশের প্রতিবেশী এক মহিলার মাধ্যমে তার স্ত্রী প্রতিমাকে দেখা করার জন্য ডেকে পাঠায় সে। কিন্তু প্রতিমা তাতে অস্বীকৃতি জানায়। এর কিছু সময় পর প্রতিবেশীর বাড়িতে টয়লেট করতে ঢোকে বাসুদেব। টয়লেট থেকে বের হয়ে ‘বাঁচাও! বাঁচাও! আমাকে এসিড মেরেছে’ বলে চিৎকার করে থানায় দিকে দৌঁড়াতে থাকে বাসুদেব। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলে কোন উত্তর না দিয়ে থানায় যায় বাসুদেব।
প্রতিমা রানীর স্বামী বাসুদেব অভিযোগ করে বলেন, তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে জাপটে ধরে হাতে পলিথিন বেঁধে, বোতল থেকে এসিড ঢেলে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে মাখিয়ে দেয়। পরে যন্ত্রনা সইতে না পেরে সে চিৎকার করে এবং দৌঁড়ে থানার দিকে যায়।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর নেওয়াজ আহম্মেদ বলেন, বাসুদেব কর্মকারকে গতকাল সোমবার হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে। সে এখন সুস্থ। তার শরীরের ২৫ ভাগ অংশে এসিড অথবা কেমিক্যাল নিক্ষেপের ফলে ক্ষত হয়েছিল।
হাতে পলিথিন বেঁধে এসিড মাখিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে ওই চিকিৎসক বলেন, এসিড, কেমিক্যাল বা কোন দাহ্য পদার্থ হাতে পলিথিন বেঁধে কাউকে মাখিয়ে দেওয়া যায় না। কোন পাত্র অথবা সিরিঞ্জ ব্যবহার করে এই জাতীয় পদার্থ নিক্ষেপ করে।
ঘোড়াঘাট থানার উপ-পরিদর্শক জিয়াউর রহমান বলেন, এসিড দিয়ে শরীর ঝঁলসানো অবস্থায় বাসুদেব কর্মকার থানায় এসে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগ দাখিলের পর পরেই আমরা বাদী, বিবাদী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে থেকে ঘটনা শুনেছি এবং ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছি। মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শেষে আমরা প্রতিবেদন দাখিল করব।

