ঘোড়াঘাটে বিনোদন পার্কে পতিতাবৃত্তি; ইউপি সদস্য সহ গ্রেপ্তার ২

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০২:৪৯ PM, ০১ এপ্রিল ২০২২

Spread the love

লোটাস আহম্মেদ, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি;

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বুলাকীপুর ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামে শোভা পাচ্ছে বিশাল এলাকা জুড়ে এক আম বাগান। চলতি বছর বাগানটির মালিক মোজাম্মেল মন্ডল তার বাগানটিতে বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করার উদ্দ্যেগ নেন। তারপর থেকেই সেখানে বিনোদনের নামে চালু করা হয় প্রকাশ্য প্রতিতাবৃত্তি।

আম বাগানটিতে বিনোদনের কিছু না থাকলেও, বাগানে প্রবেশের মূল গেটের দুইধারে দুটি কুঠরি ঘর এবং বাগানটির মাঝখানে একটি টিনের চালাযুক্ত ছোট আরেকটি ঘরে প্রকাশ্য পতিতাবৃত্তি করাতো বাগানটির মালিক মোজাম্মেল মন্ডল।

নামমাত্র এই বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশের কোন টিকেট প্রয়োজন হয় না। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পতিতা ব্যবসায় জড়িত ৫-৭ জন বিভিন্ন বয়সের নারীদেরকে চুক্তিতে সেখানে কাজে লাগায় বাগানের মালিক। প্রকাশ্য এই অসামাজিক কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয় লোকজন প্রশাসন ও বিভিন্ন মহলে একাধিক বার অভিযোগ দেয়। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে। তবে বাগান মালিক মোজাম্মেল মন্ডলের কৌশলতায় ব্যর্থ হয় পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) সেখানে সফল একটি অভিযান পরিচালনা করে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায় পতিতা ব্যবসায় জড়িত কয়েকজন নারী এবং বেশ কয়েক জন খদ্দের। তবে বাগানটির একটি কুঠরি ঘর থেকে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় শিল্পি বেগম (৩০) নামের এক পতিতা নারী সহ পাশবর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার ৫নং পুটিমারা ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) হুমায়ন কবীর সরদারকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার ইউপি সদস্য হুমায়ন নবাবগঞ্জ উপজেলার মতিহারা গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দিনের ছেলে এবং গ্রেফতার হওয়া পতিতা নারী শিল্পি বেগম লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলারহাট গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে।

বাগানটিতে গত ১ মাস থেকে পতিতাবৃত্তি করে আছে পাশ্ববর্তী বিরামপুর উপজেলার রুনা আক্তার (ছদ্মনাম) নামের ২৩ বছর বয়সী এক নারী। সে জানায়, পেটের দায়ে সে এসব কাজ করে। বাগানটিতে সে সহ বিভিন্ন বয়সী ৫-৭ জন নারী প্রতিদিন এসব কাজ করে। এসব পতিতা নারীদের বয়স অনুযায়ী নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা মূল্য। খদ্দের আসলে সেই দাম অনুযায়ী তাদেরকে ভোগ করে।

তিনি আরো জানান, খদ্দেরের কাছে থেকে পাওয়া টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেটে নেয় বাগান মালিম মোজাম্মেল মন্ডল। বাকি টাকা পায় তারা। আবার বাহিরে থেকে যদি কেও নারী নিয়ে আসে তবে ৫৫০ টাকা ঘর ভাড়া দিয়ে ৩০ মিনিট সে ঘরে অবস্থান করতে পারে যে কেউ। বাগানটিতে প্রতিদিন শতাধিক খদ্দের আসে। বাগানটির দক্ষিণ পাশে পতিতা বৃত্তির জন্যই ইট দিয়ে আরো ১২টি ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হচ্ছে। সেসব রুমে বাথরুম ও ফ্যান থাকবে। ঘরের ভাড়াও দিতে হবে দ্বিগুন।

অভিযুক্ত বিনোদন কেন্দ্রের মালিক মোজাম্মেল মন্ডল পতিতাবৃত্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আমার এই ব্যবসা সম্পূর্ণ বৈধ। বাংলাদেশের সংবিধানে পতিতাবৃত্তির বৈধতা দেওয়া আছে। আমার এই বিনোদন কেন্দ্রের মাধ্যমে নারী-পুরুষ নিজের ইচ্ছায় শারীরিক চাহিদা মেটাচ্ছে এবং বিনোদন নিচ্ছে।

ঘোড়াঘাট-হাকিমপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শরিফুল বলেন, অনৈতিক কার্যক্রম চলছে এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করি। ঘটনাস্থলে একটি পাঁকা ঘরের মধ্যে থেকে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় একজন নারী এবং একজন পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও বাহিরে ঘোরাফেরা করা অবস্থায় সন্দেহভাজন আরো এক নারী এবং পুরুষকে আটক করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া সন্দেহভাজন দুজনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘরের মধ্যে থেকে গ্রেপ্তার হওয়া দুজনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মামলা করে শুক্রবার সকালে দিনাজপুরের বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন :