গোবিন্দগঞ্জে বালু-মাটি পরিবহনে হুমকীতে বন্যারক্ষা বাঁধ-সড়ক

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৬:৪৫ PM, ২৬ জানুয়ারী ২০২১

Spread the love

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি; 

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে করতোয়া নদীর পাড় ও নদী তীরবর্তী এলাকার মাটি অবাধে কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। এতে করে জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য হারাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে বনায়ন, পরিবেশ, পরিবেশ হারাচ্ছে ভারসাম্য, হুমকীতে রয়েছে বেরি বাঁধ-সড়ক। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকল নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে চায়না কোম্পানির বেজ ক্যাম্পে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার আল আমিন ও গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমানের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে নদীর পাড় ও নদী তীরবর্তী এলাকার মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি মহল।

এদিকে, স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারী) চায়না কোম্পানির ৭টি ড্রাম ট্রাক আটক করে ছেড়ে দেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক। বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।


জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর বোয়ালিয়া, ফুলবাড়ী, বুজরুক বোয়ালিয়া (কাটাখালী) ও সাপমারা ইউনিয়নের চক রহিমাপুর গুচ্ছগ্রাম এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে নদীর পাড় ও নদী তীরবর্তী এলাকার মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি মহল। ওই মাটি ভর্তি ভারী যানবাহন বেরি বাঁধে অবাধে চলাচল করছে। এতে করে হুমকীতে রয়েছে ওই এলাকার বেরি বাঁধ-সড়ক। এছাড়া জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য হারাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে বনায়ন, পরিবেশ, পরিবেশ হারাচ্ছে ভারসাম্য। ওইসব এলাকায় মাটি পরিবহনে প্রতিদিন শতাধিক ড্রাম ট্রাক চলাচলের কারণে দেবে যাচ্ছে বেরি বাঁধ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোয়ালিয়া এলাকায় মোজাফ্ফর রহমান, বুজরুক বোয়ালিয়া (কাটাখালী) এলাকায় আনোয়ার হোসেন ও সাপমারা ইউপির চক রহিমাপুর এলাকায় আশরাফুল ইসলাম, আলম ও এনামুল নামের লোকজন নদীর পাড় এবং নদী তীরবর্তী এলাকার মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের উদাসীনতায় দিনে-দুপুরে মাটি কেটে পরিবহন করা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরে আসছেনা। এনিয়ে সতেচন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।

শাহেদ নামের এক যুবক বলেন, চায়না কোম্পানিতে চাকরী করেন ইঞ্জিনিয়ার আল আমিন আমাদের ইনচার্জ (বস্)। তার নির্দেশে আমরা এখানে কাজ করছি। কাজটি অবৈধ জানি। কিন্তু আমি তো তার নিয়ন্ত্রণে (আন্ডারে) কাজ করি।

সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে এই বাঁধ দেবে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এলাকার লোকজন বাধা দিলে স্থানীয় ইউপি সদস্য বালু ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ পাশা থানায় লিখিত দেন। এরপর পুলিশ গ্রেপ্তার করতে আসলে আমরা পালিয়ে থাকি। পরে বসে আমরা মিমাংসা করেছি। কিছু সাংবাদিকও এর সাথে জড়িত আছে। এরপর থকে ভয়ে তাদেরকে আর কেউ বাঁধা দেয়না। অফিসের লোকজন এসে দেখে চলে যায়।

এদিকে, চায়না কোম্পানির ৭টি ড্রাম ট্রাক আটক করে ছেড়ে দেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাড়ী ছেড়ে দিয়েছি তো কি হয়েছে। আমরা তো কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করব।

অপর দিকে, ট্রাক চালক মোসলেম হোসেন বলেন, আমরা তো কোম্পানির চাকরী করি। এ কাজের সঙ্গে অনেকে জড়িত আছে।

মোজাফ্ফর রহমান বলেন, আমরা ইউএনও সহ সকল প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই কাজ করছি। সমস্যা শুধু আপনারা কয়েকজন সাংবাদিক। তিনি আরও বলেন, ইউএনও বলেছেন প্রয়োজনে আপনারা রাতে কাজ করেন।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, শুধু আমি কেন। এখানে আরো কয়েকজন এ কাজের সাথে জড়িত। তারা বন্ধ করলে আমিও বন্ধ করে দিব।

অভিযোগের বিষয়ে চায়না কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার আল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যারা বালু, মাটি বিক্রি করছে আপনারা তাদের সাথে কথা বলুন। আমার কাজই হলো বালু, মাটি সংগ্রহ করা। বালু, মাটি সংগ্রহ করতে না পারলে আমার চাকরী থাকবেনা।

জানতে চাইলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, আমরা এ বিষয়ে থানায় চিঠি দিয়েছি। তারা আমাদের সহযোগিতা করছেন না।

গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি একেএম মেহেদী হাসান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে একটা চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা তো মামলার বাদী হতে পারব না। তারা বাদী হয়ে মামলা করলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মন বলেন, অনেকে ম্যানেজের কথা বলে থাকেন। আসলে তা সঠিক নয়। অভিযানে যাওয়ার আগেও তারা খবর পেয়ে যায়। এ কারণে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফিরে আসতে হয়।

জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন বলেন, ইউএনওকে বলে দিয়েছি অভিযান করতে। এরপর তারা কিভাবে কাজ করছে, বিষয়টি আমি দেখছি।

স্থানীয় এমপি আলহাজ প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব কাজ করছে অথচ প্রশাসন চুপচাপ বসে আছে কেন। রাস্তা-ঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমি ইউএনওর সঙ্গে কথা বলব।

আপনার মতামত লিখুন :