গোবিন্দগঞ্জে বেপরোয়া বালু সিন্ডিকেট

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০১:৫৫ PM, ১০ নভেম্বর ২০২০

Spread the love

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি; 

নদীমাতৃক প্রধান দেশ বাংলাদেশ। দখল-দূষণের কারণে দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর অস্তিত্ব আজ হুমকীর মুখে। নদী দখল-দূষণ ফৌজদারি অপরাধ, যে কোনো আইনে সাজাটা এজন্য দেওয়া হয়, যেন মানুষ ভয় পায়। ভয় পেয়ে অপরাধ থেকে বিরত থাকে। সেক্ষেত্রে এ নদী দখল বা দূষণকে ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য করা হয়, তাহলে এ ধরণের অপরাধ থেকে মানুষ বিরত থাকবে। সেক্ষেত্রে নদী দখল বা দূষণ কমে আসবে।

কিন্তু কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মুখে বড় বড় বুলি আওড়ান। কিন্তু বাস্তবে তার চিত্র ভিন্ন। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করেই নদী দখল-দূষণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি দেশের ব্যাপক উন্নয়নের চাপে মানবজাতির সুখ-শান্তি-সুস্থ পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়, সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। এছাড়া নদী হত্যা আত্মহত্যার নামান্তর বলেও মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

এসব নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার করতোয়া (কাটাখালী) নদীতে বালুদস্যুদের দৌরাত্ম্য বুদ্ধি পেয়েছে। ফলে নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও কৃষকের ফসলি মাঠ সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব বিষয়ে একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগিরা।

জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের নরেঙ্গাবাদ মেরি, সাহেবগঞ্জ, চকরহিমাপুর, কামারপাড়া, কাটাবাড়ী ইউনিয়নের পলুপাড়া, ফুলহার, গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের কাইয়াগঞ্জ, দরবস্ত ইউনিয়নের মাড়িয়া, পৌর এলাকার খলসি মিয়াপাড়া, বালিয়া মারি, বোয়ালিয়া, কাটাখালী ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা, রাখালবুরুজ ধর্মপুরবাজার সংলগ্ন এলাকা, বড়দহ ব্রীজ এলাকা, তালুককানুপুর ইউনিয়নের সমসপাড়া, মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বালুয়া ও দেওয়ানতলা ব্রীজ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে নদীতে প্রায় শতাধিক ড্রেজার (বোমা) মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছে। পরিকল্পনাহীন যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের ওপর নীতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অপর দিকে, এসব বালু উত্তোলনে নদী এলাকার বসতভিটা ও ফসলি মাঠ নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এছাড়া বালু উত্তোলনের ফলে পানিদূষণসহ নদীগর্ভের গঠনপ্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে এবং ভাঙছে নদী। তাছাড়া বালু বহনে গ্রামীণ সড়কে অবৈধ ট্রাক্টর, মাহিন্দ্রসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। এতে করে রাস্তা ভেঙে গিয়ে খানা-খন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। যার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগিরা।

সাহেবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা শামীম রেজা মন্টু অভিযোগ করে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে আমাদের এলাকার অনেক বসতবাড়ী ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু ঘটনাস্থলে প্রশাসন পৌঁছার আগেই বালুদস্যুরা খবর পেয়ে যায়। ফলে প্রশাসন গিয়ে সেখানে কাউকে না পেয়ে ফেরত চলে যান। পরে তারা আবারো বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখে।
চন্ডিপুর এলাকার বাসিন্দা কামরুল ও জোবায়ের এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। তারা বলেন, অভিযোগ দেয়ার পর বালুদস্যুরা উল্টো আমাদেরকে মারতে আসে। বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বালুদস্যুদের হাতে মারধরের শিকারও হয়েছেন ভুক্তভোগিরা।

ফুলবাড়ীর ইউপির আব্দুল খালেক নামে এক ব্যক্তি প্রশাসনকে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে স্থানীয় আদালতে বালুদস্যুদের নামে মামলা করেন। যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

তালুককানুপুর ইউপির সমসপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য হাফিজার রহমান বলেন, প্রশাসনের কাছে গেলে বলেন অভিযোগ দিতে। অথচ লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার মেলেনা বরং এলাকায় শক্রতা বেড়ে গেছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।

অচিরেই বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে অদূর অভিষ্যতে গোটা উপজেলা হুমকীর মুখে পড়বে বলে আশংকা বিশেষজ্ঞ মহলের।

আপনার মতামত লিখুন :