গোবিন্দগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে নানা অনিয়মের অভিযোগ
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহবায়ক এমএ মতিন মোল্লা।
অভিযোগে বলা হয়েছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের লক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৫০টি ঘর নির্মাণের জন্য ৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু সদ্য বদলী হওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মন এই কমিটির কাউকে না জানিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘর নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই ৫ কার্যদিবসে ব্যাংক থেকে ২০টি চেক ও দুটি আরটিজিসি ফরমমূলে ৬ কোটি ১১ লাখ ৪১ হাজার ১০০ টাকা উত্তোলন করেন।
রেজুলেশন অনুযায়ী ঘর নির্মাণ সামগ্রী ৫ সদস্য যৌথভাবে ক্রয় করার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। তিনি প্রভাব খাটিয়ে একক সিদ্ধান্তে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন এবং নির্মাণ সামগ্রী ক্রয়ের পর তার অফিসের পিয়ন ফিরোজ ও নাইটগার্ড মামুনকে ঘর নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্ব দেন। এসব কেনাকাটায় তিনি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন।
বরাদ্দকৃত টাকায় উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের নলডাঙ্গা গ্রামে ১২০টি, কামদিয়া ইউনিয়নে শুকুপুকুরপাড়ে ৩৫টি, বেশাইন মোলামগাড়ী পুকুরপাড়ে ২৯টি, বিনার পুকুরপাড়ে ২২টি, জোড়পুকুরপাড়ে ৪৫টি, ষাটপুকুরপাড়ে ২৪টি, শাখাহার ইউনিয়নের শিহিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ১৫টি ও মদিয়ার পুকুরপাড়ে ৬০টি ঘর নির্মাণ করার কথা।
ওইসব ঘর নির্মাণে যেসব সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে তা অত্যান্ত নিম্নমানের। প্রতিটি ঘরের বিপরীতে যেখানে ৬০ বস্তা সিমেন্ট দেওয়ার কথা সেখানে দেওয়া হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ বস্তা। ১ দশমিক ২ মিলিমিটার বালু ব্যবহারের কথা থাকলেও ভিটি বালু (ধুলা জাতীয়) ব্যবহার করা হয়েছে। ঘরে যে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে তাও নিম্নমানের।এছাড়াও ঘরের ভিত্তি স্থাপনে ১০ ইঞ্চি ৩টি ইট ব্যবহার করার কথা থাকলেও ১টি মাত্র ১০ ইঞ্চি গাথুনি দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি তদন্তপূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ৬ মে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহবায়ক এমএ মতিন মোল্লা।
এ ব্যাপারে নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা এসিল্যান্ড অফিসের নাইটগার্ড মামুন বলেন, বদলীয় হওয়া ইউএনও রামকৃষ্ণ বর্মন স্যারের দেওয়া দায়িত্বই আমরা পালন করছি। তিনি যেভাবে বলে দিয়েছেন সেভাবেই কাজ চলছে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ বলেন, টুকিটাকি যে খরচ হচ্ছে সেগুলো ব্যয় করছি। আর আগের ইউএনও সাহেব কেনাকাটা সহ মিস্ত্রীর মজুরি এবং শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করে গেছেন। তিনি যাকে যেভাবে সব কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন সেভাবেই কাজ চলছে।
কাজ শেষ না করেই ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে তো কেউ কোন টাকার জন্য আসেনি। অতএব তিনি তার দায়িত্বেই সবকিছুই করে গেছেন।
এরআগে উপজেলায় এই প্রকল্পের ১৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। যা নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়। মাস না যেতেই নির্মিত ঘরের বিভিন্ন অংশে ফাটলসহ মেঝে ফেটে চৌঁচির হয়ে যায়। ওই সময় সুবিধাভোগি পরিবারের পক্ষ থেকে ঘর পুননির্মাণের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এরপর সেগুলো মেরামত করে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিনের সঙ্গে ফোনে একাধিবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

