গোবিন্দগঞ্জে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি;
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন- গৃহহীন পরিবারের পুর্নবাসনের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সুবিধাভোগি পরিবারগুলো মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউপির নলডাঙ্গা গ্রামে ১২০টি, কামদিয়া ইউপির শুক পুকুরপাড়ে ৩৫টি, বেশাইন মোলামগাড়ী পুকুরপাড়ে ২৯টি, বিনার পুকুরপাড়ে ২২টি, জোর পুকুরপাড়ে ৪৫টি, ষাট পুকুরপাড়ে ২৪টি, শাখাহার ইউপির শিহিপুর বিদ্যালয়ের পাশে ১৫টি ও রাজাহার ইউপির মদিয়ার পুকুরপাড়ে ৬০টি ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় দফায় বরাদ্দকৃত ৩৫০টি ঘরের মধ্যে ২৩০টি ঘর ভূমিহীন-গৃহহীন সুবিধাভোগিদের পরিবারের মাঝে ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে হস্তান্তর করেন। কিন্তু উক্ত ঘরে বসবাসের আগেই দেখা দিয়েছে ফাটল। এছাড়াও ঘরে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের কাঠ, ঘরের চালা নির্মাণে রয়েছে অদক্ষতা, যারফলে সামান্য বৃষ্টিতে ঘরে ছাউনি দিয়ে পানি প্রবেশ করছে।
নলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক মজিবর রহমান থাকতেন টিনসেড ঘরে। স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি পাকা বাড়ীতে বসবাস করবেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সেই ঘর বসবাসের আগেই দেখা দিয়েছে ফাটল।
মজিবুর রহমান বলেন, মোটামুটি সবই ভালো ছিল। কিন্তু সিমেন্টের পরিমান কম দেওয়ায় বসবাসের আগেই ঘরে দেখা দিয়েছে ফাটল। ফলে ঘরগুলো যে কোন মুহুর্তে ধসে পড়তে পারে। তিনি বলেন, এর চেয়ে টিনসেড ঘরই মজবুত ছিল।
একই এলাকায় ঘর পেয়েছেন মো. সিদ্দিক নামে আরেক ব্যক্তি। সিদ্দিকের স্ত্রী রেবা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, নতুন ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেকে এসে এভাবে দেখে গেলেও কোন কাজ হয়না।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে ১২০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের সবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতিটি ঘরের মেঝেতে মাটি ভরাট করে দেয়া হয়েছে। শুধু নলডাঙ্গা গ্রামেই নয়। এমন অভিযোগ অন্যসবস্থানে নির্মিত ঘরের সুবিধাভোগিদেরও।
এসব কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা কামদিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যেসব সমস্যা পেয়েছি তা ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি। কাজ চলমান রয়েছে। এরপরও কোন সমস্যা থাকলে তা ইউএনও স্যারকে জানাবো।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, ৩২০টি ঘরের মধ্যে আমরা ২৩০টি ঘর সুবিধাভোগিদের মাঝে হস্তান্তর করেছি। যেহেতু অন্য ঘরগুলোর কাজ সম্পন্ন হয়নি। কোন সমস্যা থাকলে আমরা তা খতিয়ে দেখব।
উল্লেখ্য, উপজেলায় ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের পুর্নবাসনের লক্ষে প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ১২০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ঘর নির্মাণে নানা অনিয়ম করায় বসবাসের আগেই ঘরে ফাটল দেখা দেয়। ওই সময় এসব ঘটনায় তৎকালিন ইউএনও রামকৃষ্ণ বর্মনকে বদলি করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৫০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তৎকালিন ইউএনও রামকৃষ্ণ বর্মন বদলি হওয়ার পরও ২০ ভাগ কাজ করে ৬০ ভাগ কাজ দেখিয়ে ৩৫০টি ঘর ঘরের বিপরীতে বরাদ্দকৃত ৬ কোটি ৮২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে একাউন্ট থেকে ৬ কোটি ১১ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। যা ঘর নির্মাণের আগেই শ্রমিকের টাকা পর্যন্ত পরিশোধ দেখানো হয়।
বিষয়টি নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দেন। প্রথম দফায় প্রতিটি ঘর নির্মাণে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে পরবর্তীতে ঘর প্রতি ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজের কোন কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে তৎকালিন ইউএনও রামকৃষ্ণ বর্মনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

