গাইবান্ধায় নির্বিচারে অতিথি পাখি শিকার, লিখত অভিযোগ

DBCNEWS24DBCNEWS24
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৩:৩৪ PM, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

Spread the love
গাইবান্ধা প্রতিনিধি;
গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন চরের পাদদেশে নির্বিচারে করা হচ্ছে অতিথি পাখি শিকার। শিকারীরা নৌকাযোগে, দল বেঁধে শিকার করছেন এসব পাখি। এমন ঘটনায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে এক শিকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ করেছেন রংপুরের এক আলোকচিত্রী। অভিযোগ আমলে নিয়ে কাজ শুরু করেছে গাইবান্ধার প্রশাসন।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি এবং ওই শিকারী ও পাখি শিকারের কাজে ব্যবহৃত বন্দুকের সন্ধানে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ.কে.এম হেদায়েতুল ইসলাম।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং রংপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে লিখিত এই অভিযোগ করেন প্রকৃতিপ্রেমী আলোকচিত্রী ও রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বুলবুলির চরের পাশে ব্রহ্মপুত্র নদে ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে এক পাখি শিকারিকে বন্দুক ও শিকার করা দুইটি পাখি হাতে দেখতে পান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, সাহিত্যকর্মী রানা মাসুদ, প্রকৌশলী ফজলুল হক, হাসান মাহবুব আখতার লোটনসহ কয়েকজন প্রকৃতিপ্রেমী আলোকচিত্রী।
এসময় তারা শিকারীর হাতে দুর্লভ প্রজাতির দুটি লালঝুঁটি ভুতি হাঁস দেখতে পান। পরে তারা পাখি হাতে থাকে শিকারীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন।
একই সময় পাখি হাতে ধরা অবস্থায় শিকারীকে ক্যামেরাবন্দি করা হয় এবং তার একটি ভিডিও স্বাক্ষাতকার নেন অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। যার তিনটি স্টিল ছবি ও একটি ভিডিও অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদের ফেসবুক আইডি “তুহিন ওয়াদুদ” থেকে পোস্ট করা হয়।
ড. ওয়াদুদের ওই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়” ভিডিওতে নাম বলেছে সুজন মিয়া। স্থানীয়দের কাছে শুনলাম নাম তার বাবু। প্রতিবছর হাজার হাজার পাখি মারছে এই বাবু। নৌকায় যাদের দেখছেন তারা এই দুর্বৃত্তদের সঙ্গে এসেছেন। বিষয়টি ডিসি, এসপি, রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে লিখিত জানিয়েছি।
এছাড়া ঘটনার তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এবং ঘটনাস্থল, গাইবান্ধা জেলার ফুলছরি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বলে উল্লেখ করা হয়।
পোস্ট করা ভিডিওতে কথপকথনে শিকারীকে বলতে শোনা যায়, প্রায়ই ব্রহ্মপুত্রে নদে পাখি শিকার করেন তিনি। যেদিন আসেন ওই দিনেই প্রায় ৩ থেকে ৫ টি অতিথি পাখি শিকার করা হয় তার (শিকারীর)। “এখন আইনগতভাবে বন্দুক নিজের কাছে রাখার সুযোগ নেই”- ড.ওয়াদুদুরের এমন প্রশ্নের উত্তরে শিকারী ইশরায় বন্ধুকের মূল মালিককে দেখিয়ে দেন। ভিডিওতে বন্ধুকের মূল মালিকের নাম উজ্জ্বল চন্দ্র সরকার বলে জানা যায়।
এসময় ড.ওয়াদুদের এক প্রশ্নের উত্তরে শিকারীকে বলতে শোনা যায়, “আমার বাবার বন্দুক ছিল। তিনি (শিকারী) ছোটবেলা থেকেই পাখি শিকার করে থাকেন। এসময় পাখি শিকার আইনগতভাবে অপরাধ জেনেও পাখি শিকারের বিষয়টি স্বীকার করেন ওই শিকারী। ভিডিওর শেষ অংশে ওই শিকারীর নাম সুজন মিয়া, বাবার নাম মহিউদ্দিন মিলিটারি এবং বাড়ি সদর উপজেলার কামারজানির গিদারী গ্রাম বলতে শোনা যায়।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ.কে.এম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, “লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরই কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে একজন ভূমি সংশ্লিষ্ট অফিসারের মাধ্যমে কামারজানি ও গিদারী এলাকায় খোঁজ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আসলে প্রাথমিকভাবে তার ঠিকানা সদর এলাকায় নয়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বলে জানা গেছে। আমরা তাকে সন্ধান করছি। একই সঙ্গে বন্দুকটি এবং এর প্রকৃত মালিককেও খোঁজ করা হচ্ছে। পাখি শিকার অপরাধ। আমরা কাজ করছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা, নিয়মিত মামলা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :