‘কৃষকদের শোষণ করার অর্থনীতিতেই দেশ পরিচালিত হচ্ছে
ডিবিসি প্রতিবেদক;
কৃষকদের শোষণ করার অর্থনীতিতেই দেশ পরিচালিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহ আলম খান। বাংলাদেশ কৃষক সমিতির চতুর্দশ জাতীয় সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকার আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এই সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষক সমিতি। কৃষি এবং কৃষকের সংকট নিরসনে ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক ও সংগঠনের নেতা-কর্মিরা উপস্থিত হন।’
বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি এড. এস এম এ সবুরের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনের পরিচালনায় সমাবেশ হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভুমি আন্দোলনের নেতা বিমল কিসকু।
সমাবেশে প্রধান অতিথি শাহ আলম বলেন, কৃষকের সংকট আজ জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। দেশে আজ লুটেরা শ্রেণির রাজত্ব চলছে। যে অর্থনীতিতে দেশ পরিচালিত হচ্ছে সেই অর্থনীতি শোসন করছে কৃষকদের।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি গ্রামে গ্রামে কৃষকেরা স্বর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। কৃষক তার ফসলের লাভজনক দাম পায় না। নানামুখী সংকটে জর্জরিত কৃষক। বৈষম্যের শিকার এই কৃষকদের মুক্ত করতে তীব্র গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।’
সমাবেশের বিশেষ অতিথি সিপিবির সাবেক সভাপতি ও ক্ষেতমজুর আন্দোলনের নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘দেশ আজ দুভাগে বিভক্ত। একদিকে মুষ্টিমেয় শোসক, অন্যদিকে আপামর জনগন।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন রাষ্ট্রের টাকা পাচার হয়ে গেছে। গত ১১ বছরে ১১ লক্ষ কোটি টাকা পাচার পাচার হয়ে গেছে। আর যারা লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দেয় না, তাদেরকেই আবারও ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু কৃষক পরিশোধ করতে না পারলে তাদের কোমড়ে দঁড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যায়।’
ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজা বলেন, ১৪ বছরে ১২ বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, কিন্তু কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছে না। এখন জনগনের বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে গেছে। কৃষক তার ধান, আলু রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। যারা অন্ন যোগায় তাদের কোনো মূল্য নেই। তাহলে উন্নয়ন কার জন্য বলে প্রশ্ন করেন আনোয়ার হোসেন।
সমাবেশের শেষে কৃষক সমিতির সভাপতি এড. এস এম এ সবুর বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি কৃষি কার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র, কৃষক পেনশনসহ ১০ দাবি জানান।’
এস এম এ সবুর বলেন, ‘কৃষকের সংকটকে তুলে ধরতে এবং কৃষকদের বাঁচাতেই আমাদের এই লড়াই। কৃষি, কৃষককে বাঁচাতেই আমাদের এই সম্মেলন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কৃষকের দাবিসমূহকে সামনে নিয়ে আসাই আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড আনোয়ার হোসেন রেজা, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান নিমাই গাংগুলি, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক আবিদ হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী শেখ।
এতে বিদেশি অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভারতের সিপিআইয়ের সদস্য সারা ভারত কৃষক সভার জাতীয় পরিষদ সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ কৃষক শাখার সম্পাদক তরিত কুমার চক্রবর্তী, এম.এল.পি.ডি প্রতিনিধি ফার্মাস অর্গানাইজেশন জার্মানির গার্ড জিটনার, নেপালের অল নেপাল পিপলস ফেডারেশনের (এপিএফএ) সভাপতি ভৈরব রাজ রীগমি, ইনচার্জ পিজেন্টস উইমেন সংগঠনের (এপিএফএ) সাবিত্রা ডাখাল রিগমী।
এছাড়াও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মনজুরুল আহসান খান, শাহাদাৎ হোসেন, সিপিবির সহ সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, মাহবুব আলম, লক্ষী চক্রবর্তী, রথিন চক্রবর্তী, সহিদুল্লাহ সবুজ সহ ছাত্র, যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে প্রায় পনের হাজার কৃষকের একটি র্যালী বগুড়া শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তারা লাল কাপড়ে কৃষকের প্রতীক কাস্তে এবং লাঙ্গল খচিত হাজার হাজার পতাকা, কৃষকের দাবি সম্বলিত শত ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে ছিলেন তারা।

