কালীগঞ্জে শহীদের স্মরণে গণহত্যা দিবস পালিত
আহাম্মদ আলী, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি;
পুষ্পস্তবকের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন ও শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া এলাকায় শহীদের স্মরণে গণহত্যা দিবস পালন করেছেন উপজেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শিবলী সাদিক উপজেলায় কর্মরত অফিসারদের নিয়ে পুষ্পস্তবকের মাধ্যমে শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে ওই সব শহীদদের বিদেহী আত্নার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীরা পুষ্পস্তবকের মাধ্যমে শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া এলাকায় ন্যাশনাল জুট মিলের ভেতর কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকসহ নিরীহ ১৩৬ জন বাঙ্গালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে পাক হানাদার বাহিনীরা গুলি করে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করে। স্বাধীনতার পর মিলের ভেতরে পড়া থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকসহ নিরীহ ১৩৬ জন বাঙ্গালির মৃতদেহ, হাড় ও কঙ্কাল স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী উদ্ধার করে মিলের মসজিদের পাশে তাদের গণকবর দেন। পরে ন্যাশনাল জুট মিল কর্তৃপক্ষ শহীদদের সম্মানার্থে এবং তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মিলের দক্ষিণে মসজিদের পাশে ‘শহীদ স্মরণে ১৯৭১’ নামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন।
এরপর থেকে ১ ডিসেম্বর এলে উপজেলা প্রশাসন, মিল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেই সব শহীদদের স্মরণে মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকেন।
স্থানীয় ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ ন্যাশনাল জুট মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা সকালের নাস্তা খেতে বসার মুহুর্তে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পার্শ্ববর্তী পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল ক্যাম্প থেকে স্পীডবোডে নদী পার হয়ে মিলের ভেতর ঢুকে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে থাকে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের না পেয়ে মিলে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিক ও কোয়াটারে থাকা নিরীহ মানুষদের এক লাইনে দাঁড় করিয়ে হানাদার বাহিনীরা তাদের গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
পাক বাহিনী গণহত্যা চালিয়ে মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙ্গে তারা চলে যায়। সেই সময় পাক বাহিনীর ভয়ে এলাকার কেউ মিলের ভেতরের লাশগুলো উদ্ধার করতে সাহস পায়নি। ফলে মৃতদেহগুলো শেয়াল, শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়। দেশ স্বাধীন হলে বীরমুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীরা মিলের ভেতর গিয়ে ১৩৬ জনের মৃতদেহ বিকৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে ওই সব মৃতদেহ উদ্ধার করে ন্যাশনাল জুট মিলের দক্ষিণে মসজিদের পাশে তাদের গণকবর দেন।

