কন্যাশিশু জন্ম দেওয়ায় স্ত্রীকে তালাক
নিজস্ব প্রতিবেদক;
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে কন্যাশিশু জন্ম দেওয়ায় রোকসানা খাতুন (২৩) নামে এক গৃহবধূকে চার দিনের নবজাতকসহ বাবার বাড়ীতে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় এ ঘটনায় জরুরী সেবা ৯৯৯- এ ফোন দিলে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোমামারা গ্রাম থেকে নবজাতকসহ গৃহবধূকে উদ্ধার করে। এরপর ওই গৃহবধূ স্বামীর বাড়ীতে স্থান না পেয়ে বাবার বাড়িতে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
স্থানীয় ও গৃহবধূর পরিবারের বরাতে জানায়, গত এক বছর আগে উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামের মহব্বর আলীর ছেলে রাজু মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ারকুড়া গ্রামের লুৎফর মিয়ার মেয়ে রোকসানা থাতুনের। বিয়ের পর থেকে ভালোই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। কিন্তু গত আড়াই মাস আগে স্বামী রাজু মিয়া ডাক্তারী পরীক্ষায় জানেত পারেন তার স্ত্রী রোকসানা কন্যা সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছেন।
এরপর থেকে রোকসানার ওপর নেমে আসে অমানষিক নির্যাতন। যৌতুক জন্য বিভিন্ন অজুহাতে নির্যাতন চলে আসছিল ওই গৃহবধূর ওপর।
এরই একপর্যায়ে গত ৮ মার্চ স্বামীর বাড়িতে প্রসববেদনা উঠলে রোকসানাকে দ্রুত নেয়া হয় রংপুরের সালেহীন ক্লিনিকে। ওইদিন হাসপাতালে ডাক্তারের পরামর্শে সিজারিয়ান অস্ত্রপচারের মাধ্যমে রোকসানা জন্ম দেন একটি ফুটফুটে কন্যাশিশুর। এরপর সেখানে চারদিন থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র নিয়ে দুপুরে স্বামীর বাড়ি ঘোড়ামারায় ফেরেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার পর রোকসানাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়নি শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। বাড়ির মূল ফটকে ঝুলে দেয় তালা। চারদিনের নবজাতকসহ সারাদিন বাড়ির উঠানে বসেছিলেন গৃহবধূ। এরপর বিকেলে রোকসানারকে গত তিনমাস আগে তালাক দেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে দেন তার শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি। তাদের কথায় উপায়ান্তু খুঁজে না পেয়ে গৃহবধূ রোকসানা সন্ধ্যার দিকে ফোন করে ৯৯৯-এ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে রোকসানা ও তার নবজাতকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার শ্বশুর বাড়ির মূল গেটে তালা ও বাড়িতে কাউকে না পেয়ে তাকে সুন্দরগঞ্জে বাবার বাড়িতে পাঠায় পুলিশ।
গৃহবধূ রোকসানা অভিযোগ করে বলেন, এক বছর আগে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমার বর ভালো ব্যবহার করেই চলছিল। এরপর যখন বেবি কনসেপ করছিল তখন বেবি টেস্ট করছে জানতে পারে আমার মেয়ে সন্তান হবে। তখন থেকেই চলে আমার ওপর নির্যাতন।
তিনি বলেন, আমার স্বামী আগে থেকে জানিয়ে আসছিল, ছেলে বাবু হলে ও খুব খুশি হবে। পরে মেয়ে বাবু জন্ম হবে জানার পর থেকেই শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আর জা ওরা সবাই আমাকে নির্যাতন করছে। এক বেলা ভাত দিছে, আরেক বেলা দেয়নি। বিভিন্ন ভাবে টর্চারিং চলছিল আমার ওপর।
রাজু (স্বামী) আমাকে ফোন দিয়ে তার ফুফুর সাথে রংপুর হাসপাতালে যেতে বলছে। চারদিন পর বাবু নিয়ে বাড়িতে আসি। কিন্তু বাড়ির মধ্যে আর উঠতে দেয়নি। আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বলে যে, আমরা তোমাকে ডিভোর্ভ দিয়েছি। তখন আমি পুলিশক ফোন দেই। পুলিশ পরে সেখান থেকে আমার বাবার বাড়িতে রেখে গেছে।
রোকসানা বলেন, এই চারদিনের মেয়েকে নিয়ে আমি এখন কোথায় যাবো। আমার বাবার বাড়িতেও তেমন কোন ভেসালিটি (অর্থ সম্পদ) নেই। আমি এখন কী করবো একে (সন্তান) নিয়ে। কোথায় যাবো। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই।
রোকসানার মা ফাতেমা বেগম বলেন, মেয়ে বাবু হবে জানতে পেরে ওমরা আমার মেয়েকে অত্যাচার করে। কন্যাশিশু জন্ম হওয়ায় ওমরা আর ঘরত উঠপের দেয়নি হামার বেটিক।
তিনি বলেন, রংপুর হাসপাতাল ছোল হতে ২০ হাজার টেকা খরচ হচে। একটা টেকাও ওমরা দেয় নাই। হামরা গরিব মানুষ। হাওলাত-বাওলাদ করে টেকা দিয়েছি।
এ বিষয়ে রোকসানার স্বামী রাজু মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
রোকসানার শ্বাশুড়ি আছমা বেগম মোবাইল ফোনে জানান, বাড়ির বউয়ের কাছে ঘনঘন বন্ধুরা আসে। বউয়ের চরিত্র খারাপ। তাই তাকে তিন মাস আগে তালাক দিছে আমার ছেলে।
তিন মাস আগে তালাক দেয়া হলে এতদিন কীভাবে আপনার ছেলের বউ আপনার বাড়িতে অবস্থান করল। এমন প্রশ্নের জবাবে আছমা বেগম জানান, পেটে বাচ্চার জন্যে কিছু বলি নাই। যদি কোন কিছু করে বসে।
জানতে চাইলে সাদুল্লাপুর থানার ওসি মাসুদ রানা বলেন, নবজাতকসহ রোকসানাকে উদ্ধার করে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

